

লিপন খান, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও সড়ক দখল করে গরুর হাট বসিয়েছে স্হানীয় প্রভাবশালীরা। সপ্তাহে দুই দিন ( সোমবার ও শুক্রবার) বন্ধ থাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। এতে করে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও সড়ক দিয়ে যাতায়াতের ব্যাঘাত হচ্ছে।স্হানীয়রা জানান, সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যাবস্হা ভাল হওয়ায় আশপাশের কয়েক জেলা থেকে প্রতি সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক হাজার গরু ক্রয়-বিক্রয় করতে নিয়ে আসেন উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের কলাদিয়া বাজারে, প্রতি সোমবারের সাপ্তাহিক বাজারে ৫-৭ শত গরু বিক্রি হয়। বাজারের নিজস্ব জায়গায় না থাকায় এবং অধিক পরিমাণে মুনাফার আশায় সরকারি রাস্তা এবং ৬৩ নং কলাদিয়া সরকারি বিদ্যালয়ের কতৃপক্ষের সহযোগিতায় মাঠ দখল করে গরুর হাট বসিয়েছেন স্হানীয় প্রভাবশালীরা। এতে করে কয়েক বছর ধরে প্রতি সোমবার এবং শুক্রবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকে ও সোমবার কলাদিয়া বাজারের রাস্তা দিয়ে সাধারণ মানুষ, অসুস্থ মানুষকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া ও স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের চলাচলের বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রতি সোমবার হয়রানির স্বীকার হতে হয়।সরজমিনে দেখা যায় গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর এই বছরের ৩ জানুয়ারি এবং ১০ জানুয়ারি সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের বাউন্ডারির ভিতরে শহীদ মিনারে, বিদ্যালয়ের গ্রীলে ও খেলার মাঠে বাঁশ দিয়ে খুঁটি বসিয়ে শতাধিক গরু বেঁধে রাখা হয় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সোমবার সকালে দপ্তরি পতাকা টানিয়ে চলে যায়। শুধু বিদ্যালয়ের বারান্দা খোলা থাকে বাজার বণিক সমিতির লোকের ব্যাবহারের জন্য। স্হায়ী ভাবে মাঠে বাঁশের খুঁটি থাকায় এবং গরুর মলমূত্রের কারণে শিক্ষার্থীদের মাঠে খেলাধুলা করতে পারে না। এনিয়ে চরম ক্ষোভ ও হতাশ শিক্ষার্থী অভিভাবক এলাকাবাসীদের মাঝে। দখল কারীরা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের নেতা হওয়া সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে ভয় পায়।
পথচারী বিলকিস আক্তার জানান, স্বামী কে নিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলায় যাচ্ছিলাম কলাদিয়া বাজারে আসার পর রাস্তায় থাকা গরুর মলমূত্রে আমার জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায়। পরে আবার বাড়িতে গিয়ে কাপড় পরিবর্তন করে অনুষ্ঠানে যেতে বিলম্ব হয়।
এবিষয়ে ৬৩ নং কলাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা আক্তার কে বিদ্যালয়ে না পেয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শওকত আলী জানান, বিদ্যালয়ের সুচনালগ্ন থেকেই বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে প্রতি সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গরুর হাট হচ্ছে। একাধিকবার প্রধান শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে মৌখিক জানিয়ে কোন প্রতিকার পাইনি। কলাদিয়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সুন্দর আলী জানান, আমি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমাকে ছাড়াই সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এবিষয়ে ইজারাদার আবু হেনা মাসুম ভালোই জানে কিভাবে রাস্তা ও বিদ্যালয়ের মাঠে গরু থাকে।আওয়ামী লীগ নেতা ইজারাদার আবু হেনা মাসুম কে রাস্তা ও বিদ্যালয়ের মাঠ দখলের বিষয় মুঠোফোনে জানতে চাইলে প্রথমে দখলের বিষয়টি অস্বীকার করেন, প্রতিবেদক তাঁর কাছে তিন সপ্তাহের তথ্য প্রমান আছে জানানোর পর তিনি প্রতিবেদক কে ম্যানেজ করার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে কেন লেখা পড়ার বিগ্ন ঘটাচ্ছেন জানতে চাইলে ব্যস্ততার অজুহাতে লাইন কেটে দেন।উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবিষয়ে আমার জানা নেই, অভিযোগ পেলে ব্যবস্হা নিব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজলিন শহীদ চৌধুরী ঘটনার বিস্তারিত শুনে বিধি মোতাবেক ব্যবস্হা নিবেন বলে জানান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শুব্রত কুমার বণিক ঘটনার বিস্তারিত শুনে হতবাক, তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম কে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজলিন শহীদ চৌধুরীর সাথে কথা বলে বিধি মোতাবেক ব্যাবস্হা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।