মাসুম বিল্লাহ, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি,
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের পল্লীতে মঙ্গলবার রাতে মদ উদ্ধার করতে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় দু’পক্ষে সংঘর্ষে আট পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহত এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এসআই রেজাউল করিম বুধবার সকালে মামলা করেছেন। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, নন্দীগ্রাম থানার এসআই রেজাউল করিম-১, এসআই রেজাউল করিম-২, এসআই এটিএম রফিকুল ইসলাম, এসআই আমিনুল ইসলাম, এএসআই আল-আমিন, এএসআই আবুল কালাম, কনস্টেবল আশরাফ ও কনস্টেবল সজল। অপরদিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের অভিযোগ, তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে পুলিশ হামলা করেছে।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের দাসগ্রাম বৃন্দাবনপাড়ায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের পল্লীতে বিপুল পরিমাণ চোলাই মদ মজুত ও কেনাবেচা চলছিল। গোপনে খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। তাদের হেফাজত থেকে চোলাই মদ উদ্ধার করতে গেলে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এতে আট পুলিশ সদস্য আহত হন। এরপরও ১৮ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে গুরুতর এসআই রেজাউল করিম-২-কে প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বুধবার সকালে পুলিশের পক্ষে মাদক ও সরকারি কাজে বাধা এবং হামলার ঘটনায় নয় জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নন্দীগ্রাম দাসগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পল্লীর জাম্বু মাহাতো জানান, আগামী শনিবার তার দুই মেয়ের বিয়ে। বিয়েতে তাদের সামাজিক রীতি অনুসারে বরপক্ষের জন্য বাড়িতে চোলাই মদ তৈরি করে রাখা হয়। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে নন্দীগ্রাম থানা পুলিশের একটি দল তার বাড়িতে হানা দেয়। তারা ঘরে ঘরে তল্লাশির সময় নারী ও পুরুষদের লাঠিপেটা করতে থাকে।
এতে ক্ষুব্ধ নৃ-গোষ্ঠীরা সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হন এবং তাদের ঘেরাও করেন। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত ফোর্স এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় তার বাড়ি থেকে কিছু চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের মারপিটে হরিদাস মাহাতো, ভক্তি রানী মাহাতো, অন্তরা মাহাতোসহ সাত-আট জন আদিবাসী আহত হন। ঘটনার পর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের পল্লীর বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ স্থানীয় দাসগ্রাম বাজারে গিয়ে পুলিশি হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নন্দীগ্রাম থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, দাসগ্রাম ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের পল্লীতে চোলাই মদ উদ্ধারে গেলে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। এতে তাদের আট সদস্য আহত হন। তাদের হেফাজত থেকে ১৮ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পৃথক মামলা হলেও বুধবার দুপুর পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, হামলাকারীরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য নয়, স্থানীয় সন্ত্রাসী। মাদক ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে। শুধু মাদক মামলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের আসামি করা হয়েছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।