সাইফুর রহমান শামীম,, কুড়িগ্রাম।। কাছুয়ানী। সহায়-সম্বলহীন। দিন কাটে ভিক্ষায়। থাকতেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চড়-বড়লই বাংলাবাজার এলাকা বেড়িবাঁধের ওপর। সম্প্রতি বেড়িবাঁধ থেকে এমন ভিখারি-দরিদ্র পরিবারগুলোকে ছাপড়া ঘরগুলো সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ওই নির্দেশের পরই চোখে অন্ধকার দেখছেন ৭০ বছর ছুঁই-ছুঁই বৃদ্ধা কাছুয়ানী। তিনি বলেন, ‘হামার তো কোনো জমিজমা নাই। হামরা এলা কনঠে যাই বাহে!’ ইত্তেফাক অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই আর্তি জানান।
শুধু কাছুয়ানী নন, ছবরুল, ছলিল, মোমেনা, মালেক, খালেক, মনির, রহিম সাধু, আক্কাস, আমিনুল, শহিদুলসহ প্রায় ৫০ জনের পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়ে ধরলার ভাঙনে। তারা ঠাঁই নিয়েছিলেন বেড়িবাঁধে। এখানে কোনো রকমেই ছাপরা ঘর গত ৫ বছর ধরে তারা এখানে বসবাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব ছাপরা ঘর সরিয়ে নেওয়ার নিদের্শ দেওয়ার কারণে অর্ধ-শতাধিক পরিবার ভুগছে চরম হতাশায়।
কাছুয়ানী জানান, এক সময় তার স্বামী মোক্তারের অনেক জমিজমা ছিল। ধরলা নদী ঘিলে খেয়েছে ভিটেমাটিসহ সব। এখন বয়সের ভারে তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। স্বামী মারা গেছেন ১৫ বছর আগে। একটা মেয়ে ছিল। বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে কাশেম, ছেলের বউ আছমা ও দুই বছরের নাতিসহ তাদের সংসার। বেড়িবাঁধে ঘর করে ভালোই ছিল কাছুয়ানীর পরিবার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশ এলো ছাউনি ঘর সরিয়ে নিতে। এরই মধ্যে মাইকিং করা হয়েছে ৭ দিনের মধ্যে এসব স্থাপনা সরানোর জন্য।
এই বিষয়ে কাছুয়ানী বলেন, ‘বাধেঁই হামার ঠিকানা। এটাও যদি ভেঙে দেয়, কনঠে যাবো। আমার কি কুনু ব্যবস্থা হবে না, বাহে?’
আশরাফুল নামের একজন শিক্ষক বলেন, ‘যারা ওয়াপদা বাঁধে ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছেন, তাদের অধিকাংশ পরিবারই ধরলার ভাঙনের শিকার। এই মুহূর্ত্বে ঘরবাড়ি সরিয়ে কোথাও যাওয়ার মতো তাদের কোনো জায়গা নেই। এছাড়া, সবাই গরিব, অসহায় ও দিনমজুর। প্রতিটি পরিবার অসচ্ছল। সবার চেয়ে কাছুয়ানীর অবস্থা করুণ। তাদের জায়গা-জমি কিছু নেই। একেবারে অসহায়।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে ঘরবাড়ি, বাজারসহ অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে আছেন, তাদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে আমরা সেখানে বাঁধ সম্প্রসারণের জন্য কাজ শুরু করবো।’
যাদের মাথা গোঁজার ঠাই নেই, সেই পরিবারগুলো কোথায় যাবে, কিভাবে তাদের বাসস্থান হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, এখনো এই বিষয়ে কোনো নিদের্শনা পাওয়া যায়নি।