সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম।। ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের গ্রামীণ কাঁচা সড়কের দুই প্রান্তে দুটি ব্রিজ ও একটি স্লুইস গেট। সড়কসহ এসব ব্রিজ নির্মাণের পর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এলাকাবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেও ২০১৭ সালের বন্যায় তা ভোগান্তিতে রূপান্তরিত হয়। ওই বন্যায় উল্টে যায় একটি ব্রিজসহ স্লুইস গেটটি। সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে অপর ব্রিজও। সেই থেকে চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়ে দুই ইউনিয়নের লাখো মানুষ। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোঘলবাসা ইউনিয়নের চরসিতাইঝাড়-নয়ারহাট সড়কের চিত্র এটি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের ব্রিজ/কালভার্ট প্রকল্পের আওতায় এ সড়কে দুটি ব্রিজ নির্মাণের পর স্থানীয় লোকজন এক সপ্তাহও ব্যবহার করতে পারেনি। সংস্কারের জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তা আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এমনকি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি মন্ত্রণালয় থেকে পরিদর্শন করা হলেও চার বছরেও জনভোগান্তি দূর হয়নি।
সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোঘলবাসা ইউনিয়নের চরসিতাইঝাড় মৌজায় কোবেদের বাড়ির পূর্ব পাশে ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ ব্যয় পরিশোধ করে অধিদফতর। একই সড়কের পূর্ব প্রান্তে প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যেরে আরেকটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও সেটির চূড়ান্ত বিল পরিশোধের আগেই বন্যার পানির তোড়ে ভেঙে যায়। একই বন্যায় পশ্চিম প্রান্তের ব্রিজের সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে পুরো সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। অধিদফতরের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও পরবর্তী সময়ে সড়ক ও ব্রিজ সংস্কারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সেই থেকে যোগাযোগ বিড়ম্বনায় ওই এলাকার লাখো মানুষ।
চর সিতাইঝাড় গ্রামের বাসিন্দা আবু বকর জানান, ব্রিজ নির্মাণের পর কোনও সুবিধাই নিতে পারেনি স্থানীয় জনগণ। ব্রিজের সংযোগ সড়ক না থাকায় বন্যার সময়তো বটে, শুকনো মৌসুমেও ওই সড়কে চলাচল করা যায় না। মানুষের স্বাভাবিক যাতায়াতসহ পণ্য পরিবহনে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় লোকজন।
আবু বকর বলেন, ‘এমন ব্রিজ বানাইছে যে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি হইছে। বানের পানিত রাস্তাও ভাঙছে, ব্রিজও ভাঙি আছে। দুই পাকে ব্রিজ ভাঙি আছে, আর মাঝের সড়ক ভালো। হামার কষ্ট কাইয়ো দেখেও না, বোঝেও না।’
ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত চর কৃষ্ণপুরের বল্টুর মোড় বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, চর সিতাইঝাড় মৌজার ওই সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নদীতে পানি থাকলে নৌপথে পণ্য পরিবহন করা গেলেও শুকনো মৌসুমে বাড়ে বিড়ম্বনা। এতে করে পরিবহন ব্যয় বেড়ে পণ্যের দামের ওপর প্রভাব পড়ে। এ ছাড়াও চরাঞ্চল থেকে কৃষি পণ্য পরিবহনে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে যাত্রাপুর কিংবা পাঁচগাছী হয়ে শহরে যেতে হয়। এতে ভোগান্তি ও খরচ আরও বেড়ে যায়।
মোঘলবাসা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী জানান, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নসহ মোঘলবাসা ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের প্রধান সড়ক এটি। এই সড়ক দিয়ে শহরে সহজে যাতায়াত করা যায়। কিন্তু সড়কের দুই প্রান্তে দুটি ব্রিজ ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ায় বড় একটি জনগোষ্ঠীর যাতায়াতে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও কোনও ফল পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘ব্রিজ দুটি নির্মাণের পর সাত দিনও ওই সড়কে মানুষ যাতায়াত করতে পারেনি। এর মধ্যে ২০১৭ সালের বন্যায় ব্রিজসহ সড়ক ভেঙে যায়। লাখো মানুষের দুর্ভোগের কারণ হলেও সড়কটি সংস্কারে কেউ কোনও উদ্যোগ নেয়নি। আমরা চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি।’
যোগাযোগ করা হলে সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খন্দকার মো. মিজানুর রহমান ওই এলাকার জনভোগান্তির কথা স্বীকার করে জানান, সে সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনগণের চলাচলের সুবিধার কথা চিন্তা করে ওই সড়কে প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও বন্যার পানির স্রোতে তা ভেস্তে যায়। বন্যাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় সেগুলো আর মেরামত করা হয়নি। ফলে জনগণ ভোগান্তিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কয়েকবছর ধরে স্থানীয়রা ভোগান্তি সহ্য করলেও নানা কারণে আমরা সড়কটি মেরামত করতে পারিনি। চলতি বছর টিআর-কাবিখা প্রকল্প থেকে সড়কটি সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হবে। ভেঙে যাওয়া ব্রিজটির জায়গায় নতুন করে করে ব্রিজ নির্মাণসহ সড়কটি জনগণের চলাচলের উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ পাঠানোর উদ্যোগ নেবো।’
সড়কটি ব্যবহার উপযোগী করার বিষয়ে কী উদ্যোগ নেওয়া হবে- জানতে চাইলে সদর উপজেলার নবনিযুক্ত নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেদুল হাসান বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আপনার কাছেই প্রথম জানলাম। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রকল্পের সংস্থান সাপেক্ষে আমরা সংস্কারের উদ্যোগ নেবো’।