মোঃ পারভেজ খান, মোংলা প্রতিনিধি ঃ মোংলা বন্দরের অর্থনৈতিক জোনে কর্মরত নারী শ্রমিকদের আবাসনের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নব নির্মিত ডরমেটরির উদ্বোধন করেছেন বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান। বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় ইপিজেডের ভেতরে নির্মিত আধুনিক এ ডরমিটরির উদ্বোধন করেন ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মোংলা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ সিদ্দিক ও পরিচালক মুহাম্মদ নাজমুল আলমসহ ইপিজেডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিনিয়োগকারী এবং তাদের প্রতিনিধিরা।
মোংলা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ সিদ্দিক জানান, প্রায় ৭৪ হাজার ২৪৪ বর্গফুট আয়তনের চারতলা বিশিষ্ট এই ডরমিটরিতে ১ হাজার ৮ জন শ্রমিক বসবাস করতে পারবেন। অবস্থানগত কারণে মোংলা ইপিজেড লোকালয় থেকে দূরে হওয়ায় ইপিজেড সংলগ্ন এলাকায় শ্রমিকদের বসবাসের কোন ব্যবস্থা নেই।
ফলে শ্রমিকদের দূরে বসবাস করতে হতো, যা বিশেষত নারী শ্রমিকদের ভোগান্তির কারণ হতো। শ্রমিকদের আবাসনের এ সমস্যা সমাধানে ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বেপজা গভর্নর বোর্ডের ৩৩ তম সভায় ইপিজেডের শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের একা বা পরিবারসহ বসবাসের জন্য ডরমিটরি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।
সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোংলা ইপিজেডে কর্মরত নারী শ্রমিকদের বসবাসের জন্য ২০১৯ সালে চারতলা বিশিষ্ট এ ডরমেটরির নির্মাণ কাজ চলতি বছর শেষ হয়। দেশের ৮ টি ইপিজেডের মধ্যে বেপজার নির্মিত এটিই প্রথম নারী শ্রমিক ডরমেটরি।
৩ দশমিক ৮ একর জমির উপর ২৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ডরমিটরিতে শ্রমিকদের বসবাসের জন্য আধুনিক সুযাগ-সুবিধা সম্বলিত ১২৬ টি কক্ষ রয়েছে। ডরমিটরির নিচ তলায় ৫০০ জনের একসাথে খাবার উপযোগী ডাইনিং রুম, চিত্ত-বিনোদনের জন্য ইনডোর গেমিং রুম ও টিভি রুমের ব্যবস্থা রয়েছে ।
দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত প্রত্যেক তলায় একটি করে নামাজ ঘর বা কমিউনিটি স্পেস ও দুইটি করে ডে-কেয়ার রুম রয়েছে। শ্রমিকদের সহজে উঠানামার জন্য রয়েছে পাঁচটি সিঁড়ি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নিয়মিত সংযোগের পাশাপাশি একটি জেনারেটর ও শ্রমিকদের জন্য পরিশোধিত সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য নিরাপত্তা প্রহরী ছাড়াও সিসিটিভি নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে ও অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেশের সুষম উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে ১৯৯৮ সালে মোংলা ইপিজেড প্রতিষ্ঠিত হয়। ৩০৩ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই ইপিজেডে ২৫৪ টি শিল্প প্লট তৈরি করা হয়েছে, যার অধিকাংশই ইতোমধ্যে বিনিইয়োগকারীদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মোংলা ইপিজেডে বর্তমানে উৎপাদনরত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৪ টি এবং উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায় আছে আরও ৮ টি প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশসহ জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডের বিনিয়োগকারীরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এখানে বিনিয়োগ করেছে। মোংলা ইপিজেড থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্যসমাগ্রী রপ্তানি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৮ হাজার ১৫০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।