মোঃ খলিলুর রহমান সাতক্ষীরা :
২০১৬ সাল থেকে হাত ও পায়ে গজিয়ে ওঠা গাছের শেকড়ের মতো অংশগুলো এ পর্যন্ত ২৫ বার অপসারণ করা হয়েছে। চিকিৎসকদের ভাষায় রোগটির নাম ‘ট্রি ম্যান সিনড্রোম’। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে এখনো। খুলনা জেলার পাইকগাছা আবুল বাজনদারেরবাড়ি।
বর্তমানে তিনি বাড়িতে থাকলেও মাঝে মধ্যে গিয়ে ঢামেক হাসপাতাল থেকে অপারেশন করিয়ে আসেন।
২৮ বছর বয়সী আবুল বাজনদারের অসুস্থতা তিন বছর আগে সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তার হাত ও পায়ে গাছের ন্যায় শাখা-প্রশাখার বৃদ্ধিকে শরীর থেকে বাদ দেওয়ার জন্য তিনি অনেক অস্ত্রোপচার করেছেন কিন্তু তার অসুস্থতা পুনরায় ফিরে এসেছে।
বাজনদার ‘এপিডার্মডোসিসপ্লাসিয়া ভেরুস্সিফর্মিস’ নামের একটি রোগে ভুগছেন। তিনি এই রোগের সঙ্গে গত দুই দশক ধরে তার জীবন অতিবাহিত করছেন। তার শরীরের অধিকাংশ অংশে, গাছের ছালের ন্যায় অংশবিশেষ দেখা যায়। এরকম শারীরক অবস্থার কারণে, হাত ও পায়ে প্রায় ৫ কেজি ওজনের বোঝা বহন করতে হয় আবুল বাজনদারকে।
এই রোগটি শরীরের ইমিউনো সিস্টেমে কোনো ত্রুটি থাকলে হয় সাধারণত, যার ফলে মানব শরীর human papilloma virus দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যা থেকে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। ত্বকের এরকম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সংক্রান্ত রোগ সারা পৃথিবীতে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষেরই রয়েছে।
ডাক্তারদের কথা অনুযায়ী, ২০১৬ সালে মোট ২৫ বার শল্যচিকিৎসা করা হয় বাজনদারের কিন্তু এরপর মে মাসে সে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং হসপিটালের ডাক্তার যিনি বাজনদারের চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন তিনি জানান, অনেকবার সার্জারির পর এই বিষয়টি ধীরে ধীরে ঠিক হতে শুরু করে কিন্তু রোগী হঠাৎই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসা বন্ধ করে দেয়। তাকে হাসপাতালে আসতে বলা হলেও সে আসেনি।
তিনি আরও বলেন, (২০শে জানুয়ারি) বাজনদার আবারও হাসপাতালে আসে তার মায়ের সাথে। তবে আরও ৬ মাস আগে আসা উচিৎ ছিল। এখন পরিস্থিতি বেশ জটিল। তার হাত আর পায়ের চামড়া ১ ইঞ্চিরও বেশি বেড়ে গেছে আর গাছের ছালের ন্যায় জিনিস আবারও তৈরি হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতি আবুলের কম করে ৫-৬টি অপারেশন করতে হবে। আবুল তার এই অস্বাভাবিকতা প্রথম লক্ষ্য করে যখন তার ১০ বছর বয়স।
২০১৬ তে অপারেশনের আগে আবুল নিজের হাত দিয়ে কোনো কাজই করতে পারতো না। সে এক সাক্ষাৎকারে জানায়, সে আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতো বাঁচতে চায়। সে তার আদরের মেয়েকে নিজে হাতে কোলে নিতে চায়।
শুরুর দিকে শরীরের এরকম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখে আবুল নিজেই গাছের ন্যায় অংশগুলি কেটে বাদ দিতে চেয়েছিল। আর পরে সে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও করে। কিন্তু তাতে অবস্থার আরও অবনতি হয়।
আবুলের চিকিৎসক জানান সারা পৃথিবীতে এই বৃক্ষমানব রোগে আক্রান্ত মানুষ মাত্র ৩ জন রয়েছেন। তার মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার এক গ্রামের বৃক্ষমানব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির অপারেশন ২০০৮ সালে করা হয়।
২০১৭ সালে অপারেশনের পর আবুলের শরীর স্বাভাবিক হলেও তার শরীরে সম্প্রতি আবার তার এই রোগ দেখা দিয়েছে। এখন দরিদ্র পরিবারের আবুল কিভাবে চিকিৎসার খরচ করবেন সেটাই চিন্তার বিষয় তার কাছে।