মোঃ মজিবর রহমান শেখঃ ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার ভরনিয়া গ্রামে ভরনিয়া দাখিল মাদ্রাসা দেখে মনে হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, যেন খড়ের মাঠ। মাদ্রাসায় শুরু হয়েছে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। পরীক্ষায় সকল ছাত্র-ছাত্রীদের অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মাত্র ৭ শিক্ষার্থী। শিক্ষকরা অফিস রুমে আর শিক্ষাথীরা পরীক্ষা দিচ্ছে বই খুলে। ১৮ জন শিক্ষক কর্মচারী নির্ধারিত স্কেলে বেতন নিলেও ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিসহ শিক্ষাদানে নেই কোন ভূমিকা। বছরের পর বছর ধরে সরকারের কোটি কোটি টাকা গোচ্ছা গেলেও নেই কোন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহীতা। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানালেন এলাকাবাসীসহ স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে রাণীশংকৈল উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৪০ কি: মিটার। আর উপজেলা শহর থেকে মাদ্রাসার দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। ১৯৬৪ সালে ভরনিয়া দাখিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এমপিও ভূক্ত হয় ১৯৮৫ সালে। এক সময় নাম ঢাক থাকলেও এখন পরিনত হয়েছে ৭ শিক্ষার্থীর পাঠশালায়। শিক্ষক, কর্মচারীও আছেন ১৮ জন। ইবতেদায়ী থেকে দাখিল পর্যন্ত রয়েছে দশটি শ্রেনি কক্ষ। কাগজ কলমে শিক্ষার্থী রয়েছে ২৪৫ জন। কিন্তু বাস্তবে এর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছেন ৬ষ্ট শ্রেণীর ১ জন, ৭ম শ্রেণীর ১ জন এবং নবম শ্রেণীর ৫ জন। শিক্ষকরা অফিসে বসে গল্প গুজব করছেন, আর ৭ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছেন বই খুলে। অফিস কক্ষে প্রবেশ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ঝুলানো দেখে মনে হয় এ যেন আরেক অবহেলা। শিক্ষার্থী না থাকলেও ৮৫ লাখ টাকা ব্যায়ে বরাদ্দও পেয়েছে নতুন ভবন নির্মাণের। মাদ্রাসার নামে ১৫ বিঘা আবাদী জমি থাকলেও সেগুলো দেওয়া হয়েছে বন্ধকী। এ জন্য দায়ি করছেন সুপার, সহ-সুপার ও আনিসুর রহমান নামে এক শিক্ষককে। ভরনিয়া গ্রামের ইউসুফ আলী বলেন এই সুপার আসার পর থেকে মাদ্রাসার অবস্থা করুন। ছেলে-মেয়েরা মেট্রিক পাশ করতে পারে না, সব ফেল করে। মাদ্রাসায় এখন কোন ছাত্র-ছাত্রী নেই। মাদ্রাসার জমি আছে সে গুলোও বন্ধকী দিয়েছে। ঐ গ্রামের বাবুল হোসেন বলেন, শিক্ষকরা ঠিকভাবে ডিউটি পালন করে না, ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের জীবন গড়াতে অন্য বিদ্যালয়ে চলে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন যেখানে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতি বাড়াতে কারো কোন পদক্ষেপ নাই। সেখানে কর্মচারী নিয়োগে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য এবং মাদ্রাসার জন্য ৮৫ লাখ টাকা ব্যায়ে নতুন ভবন বরাদ্দ হয় কি ভাবে?
মাদ্রাসা ব্যবস্থা কমিটির অভিভাবক সদস্য আব্দুল করিম বলেন কমিটির কোন মিটিং হয় না। ছাত্র-ছাত্রী এখন ৬-৭ জন। শিক্ষকরা সময় মতো আসে না। ৬০ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পায়। এই টাকা কোথায় যায়, কে পায় ? একদিন মাদ্রায় গিয়ে দেখি ৫ জন শিক্ষক এসেছে, এর মধ্যে একজন ঘুমাচ্ছে। তিনি শিক্ষকদের ক্লাসে যাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে শিক্ষকরা বলেন ছাত্র-ছাত্রী নাই, ক্লাসে গিয়ে কি করবো ?
ভরনিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আতাউর রহমান গার্জিয়ানদের (গার্ডিয়ান) বলা হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের আসার জন্য। কিন্তু কাজ-কাম পড়ে গেল, কাজ-কামের জন্য ছাত্ররা আসছে না। করোনার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা আসে নাই। ছাত্র-ছাত্রীরা কেন আসছে না, অভিভাবকরা কেন পাঠাচ্ছে না ? এটার জন্য চেষ্টা করছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাসেম বলেন স্থানীয় জনগণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটি যাই। গিয়ে দেখি কোন ছাত্র-ছাত্রী নাই। কয়েকজন শিক্ষক আছে, সুপারও ছিল না। একটি ক্লাস রুমে প্রবেশ করে দেখি সেখানে ছাগল ও মাদুরের পায়খানা। যা আমাকে হতবাক করেছে। পড়ালেখাও হয় না, বিষয়টি আমি মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে অবগত করেছি। এই পরিনতির জন্য তিনি শিক্ষকদের দায়িত্বহীনকে দায়ি করেন। রাণীশংকৈল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৈয়ব আলী মাদ্রাসা গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন আমি যোগদান করার প্রায় এক মাস হলো। এসে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে মতবিনিময় করেছি। কিন্তু মাদ্রাসা পর্যায় তা করা সম্ভব হয়নি। তবে খুব তাড়াতাড়ি এই পরিস্থিতি উত্তরণের উপায় খুজা হবে। প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শণ করে যদি অনিয়ম পাওয়া যায়. তাহলে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সর্ম্পকিত খবর সমূহ.
November 21, 2024