মোঃ মজিবর রহমান শেখঃচলতি আমন মৌসুমের শুরুতেই ঠাকুরগাঁও জেলা সদর সহ ৫ টি উপজেলায় রাসায়নিক সারের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা অসাধু সার সিন্ডিকেট বাহিনী ডিলাররা সার কৃষকদের না দিয়ে ফলে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে খুচরা সারের দোকানে বালিয়াডাঙ্গী, রাণীসংকৈল, হরিপুর ও পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও সদর সহ ৫ টি উপজেলার আমন চাষিরা সার কিনতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিলোও সার ব্যবসাযীরা মানছেনা ঠাকুরগাঁও জেলার ৫ টি উপজেলার সর্বত্র ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে সারের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ভরা আমন মৌসুমে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। খোলাবাজারে সারের এমন লাগামহীন দাম বাড়ার পরও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। যার কারণে বিক্রয়ের রশিদ ছাড়াই ইচ্ছেমতো সারের দাম নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় সর্বত্র আমন ধান রোপণ শুরু হয়েছে। সেই সুযোগে কিছু অসাধু সার ব্যবসায়ী কৃষকদের কাছে সার সঙ্কটের কথা বলে সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক হারে বিভিন্ন ধরনের সার বিক্রয় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে কৃষক সার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কালমেঘ হাট, কুশলডাঙ্গী হাট, লাহিড়ী হাট, মড়ল হাট, পাড়িয়া হাট, আমজানখোর রত্নাই স্কুলের হাট, বাদামবাড়ী হাট, হলদিবাড়ী হাট, খোঁচাবাড়ী, লোহাগাড়া হাট, হরিণমারী হাট সহ বিভিন্ন হাট-বাজারে সরকার নির্ধারিত দামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একশ্রেণীর অসাধু সার ব্যবসায়ী চড়া দামে সার বিক্রি করছে। ইউরিয়া প্রতি বস্তা সরকারিভাবে ১১০০ টাকা করে বিক্রি করার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা বিক্রয় করছে ১২০০-১৩০০ টাকায়। টিএসপি বিক্রিয় করার কথা এক হাজার ১০০ টাকায় কিন্তু বিক্রি করছে এক হাজার ২৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায়, এমওপি বিক্রিয় করার কথা ৭৫০ টাকায় কিন্তু বিক্রিয় করছে এক হাজার ১৩০০ টাকায়, ডিএপি বিক্রি করার কথা ৮০০ টাকায় কিন্তু বিক্রিয় করছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায়। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় সরকারিভাবে সার বিক্রির করার জন্য বিসিআইসির ডিলার ৮ জন এবং বিএডিসির ডিলার ২৫ জন। এসব ডিলার সরকারিভাবে সার পেলেও তারা কোনো কৃষকের কাছে সরকারি দামে সার বিক্রিয় করেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনিতেই গত বোরো মৌসুমে কৃষকদের ধান নষ্ট হয়ে তারা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এর ওপর ঐ সব অসাধু সার ব্যবসায়ী বেশি দামে সার বিক্রিয় করায় কৃষকরা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমন ধান আবাদ করছেন। বিভিন্ন গ্রামের বেশ কিছু কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সার কিনতে গেলে তারা বেশি দাম নেয় কিন্তু তারা কোনো রশিদ দিতে চায় না। অপরদিকে, বেশির ভাগ সারের দোকানে কোনো মূল্যে তালিকা টাঙানো হয় না। যে কারণে কৃষকরা বুঝতে পারেন না সরকারিভাবে সারের দাম। প্রতি বস্তা সারে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বাজার মনিটরিং করলে সারের দাম এমন বাড়তো না। এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় জানান, তার জানা মতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শহরে কেউ সারের দাম বেশি নিচ্ছে না। যদি কেউ নেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সারের মূল্য বৃদ্ধিতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় প্রতি কেজি ইউরিয়ার দাম ছয় টাকা বৃদ্ধির ঘোষণার সাথে সাথে বাজারে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ইউরিয়া বিক্রয় হচ্ছে এক হাজার ১০০ টাকা থেকে এক হাজার ১২০ টাকা পর্যন্ত। আগে বিক্রয় হয়েছে ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায়। এ ছাড়া পরিবহন খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে সব ধরনের রাসায়নিক (নন ইউরিয়া) সারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। লাহিড়ী বাজারে প্রতি বস্তা টিএসপি প্রকার ভেদে এক হাজার ৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ৯৫০ টাকা, এমওপি এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ৬৫০ টাকা, ডিএপি ৭৮০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ৪৫০ টাকায় কৃষক পর্যায়ে বিক্রয় করা হচ্ছে। মেসার্স কবির এন্টার প্রাইজ ডিলার সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, বাজারে রাসায়নিক সারের কোনো সঙ্কট নেই। কিন্তু মূল্য আগের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় সার ক্রয় করতে এসে প্রায় কৃষকই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি সারের দাম পাঁচ থেকে ১০ টাকা করে বেশি নিচ্ছেন। বাজারে সঠিক মূল্যে সার বিক্রি করা হচ্ছে কিনা তা যাচাই করতে কৃষি বিভাগের কোনো তদারকি নেই বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। কৃষকদের অভিযোগ,খুচরা বিক্রেতারা তাদের কাছ থেকে সারের দাম বেশি নিচ্ছেন। ফলে মানুষ বেশি দামেই সার কিনতে বাধ্য হচ্ছে। এতে করে ফসল উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী রুপগঞ্জ গ্রামের কৃষক তফিল উদ্দীন, রশিদুল ইসলাম, সাইদুর রহমান, মোজাম্মেল হক, কাদশুকা কাজিবস্তী গ্রামের আব্দুল্লাহীল বাকী, আব্দুল্লাহীল কাফী, আনোয়ার হোসেন, মোশারফ হোসেন,আব্দুল জলিল, মধুপুরের জুহা, কমিরুল ইসলাম, লালাপুরের নুরুল ইসলাম, হামিদুর রহমান, গিয়াস উদ্দীন, বজলুর রহমান, তালিম উদ্দীন, আব্দুর রহমান, উত্তর পাড়িয়া তিলকরা গ্রামের দারুল ইসলাম,তহিরুল ইসলাম, মুক্তাবুল ইসলাম, আনারুল ইসলাম, ভান্ডারদহ গ্রামের পয়মত আলী, সামশুল হক, এরশাদ আলী, পারুয়ার আব্দুস সবুর বলেন, ডিলার ও খুচরা সার বিক্রেতারা তাদের দোকানে লোক দেখানোর জন্য মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রেখেছেন। কিন্তু সেই দামে কেউ সার বিক্রি করছেন না। তারা প্রতি কেজি টিএসপি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা এবং এমওপি প্রতি কেজি ২৮ থেকে ৩২ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন। এসব বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে।
আপরদিকে এলাকার কৃষকেরা জানান, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা চলতি মৌসুমে সারের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে অসাধু ববসায়ী সিন্ডিকেট অতিরিক্ত দাম হাতিয়ে নিচ্ছেন। প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। আর সার বিক্রি করে কৃষকের হাতে বিক্রির রশিদ দিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। উপজেলার উত্তর পাড়িয়া তিলকরা
সর্ম্পকিত খবর সমূহ.
November 28, 2024