মোঃ ওসমান গনি ইলি, কক্সবাজারঃকক্সবাজার জেলায় দায়িত্ব পালনে দক্ষ জনবান্ধব এবং জনসাধারণের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠা ও দেশের সবচেয়ে বড় ইয়াবার চালান জব্দে নেতৃত্ব প্রদানকারী
একজন পুলিশ সুপারকে বিদায় জানাতে হচ্ছে কক্সবাজারবাসী-কে। তিনি হলেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. হাসানুজ্জামান পিপিএম ৷
তিনি ২০২০ সালের ৩১ জুলাই সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর এসপি থেকে শুরু করে জেলা পুলিশে কর্মরত সবাইকে একযোগে বদলি করা হয়। সেপ্টেম্বরের শেষে দায়িত্ব নেয় নতুন টিম। কঠিন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণে সেই নতুন টিমের কক্সবাজারের ২৫তম পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় মো. হাসানুজ্জামান কে ৷
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কক্সবাজার জেলার প্রতিটি থানা এখন পুলিশিং সেবাবান্ধব ও দালালমুক্ত। যার কাজ সেই করছে। থানাকে ব্যবহার করে দীর্ঘদিনের অনৈতিক সুবিধাভোগীরা পাত্তা পাচ্ছেন না। পুলিশের জ্ঞাতসারে মিথ্যা মামলার শিকার হয়নি কেউ। থানাগুলোতে ভুক্তভোগী সেবা প্রার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ভালো ব্যবহার, দালাল টাউট-বাটপার শ্রেণীর লোকজন আশ্রয় প্রশ্রয়ের নেই কোন সুযোগ ৷
মাত্র এক বছর ১১ মাসের মাথায় গত ২ মে ২০২২ তারিখে তিনি অ্যাডিশনাল ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হন এবং পুলিশ হেডকোয়াটারে বদলীর আদেশ হয়।
কক্সবাজারে অল্প সময়ই পুলিশ সুপারের তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এই সল্প সময়ে তার কাজের মাধ্যমে কক্সবাজারের মানুষের মনে আস্থা এবং বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। একজন জনবান্ধব, বিনয়ী ও কর্মদক্ষ পুলিশ সুপার হিসেবে কক্সবাজারে সর্বমহলে পরিচিত পেয়েছেন।
জেলা পুলিশের তথ্যে দেখা যায়, এসপি হাসানুজ্জমানের দায়িত্ব আমলে দেশের সবচেয়ে বড় ইয়াবার চালান উদ্ধার, মামলার তদন্ত নিষ্পত্তি, ওয়ারেন্টমূলে আসামি গ্রেফতার, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, ক্লু-লেস ঘটনার তথ্য উদ্ঘাটনে সক্ষমতার স্বাক্ষর রেখেছেন৷
গোপন সূত্র এবং এসপি তদারকিতে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সদরে চৌফলদণ্ডি ব্রিজ এলাকা ও শহরের নুনিয়ারছড়ায় অভিযান চালিয়ে ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ইয়াবা উদ্ধার এবং নগদ এক কোটি ৭১ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করে পুলিশ। এ সময় আটক হয় চারজন ইয়াবাকারবারী, যা দেশের ইতিহাসে এ যাবতকালের র্সববৃহৎ ইয়াবার চালান।
জেলা পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্রের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত জেলা পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে ৮৪ লাখ ৫৫ হাজার ৭৬৮টি ইয়াবা উদ্ধার হয়। এ ছাড়া দুই লাখ ২০ হাজার অগ্নিদগ্ধ ইয়াবা, পাঁচ কেজি ১৬০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ, ১৩৭ বোতল বিদেশি মদ ও ১৯২৬ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করে পুলিশ। এক হাজার ৫০৯টি মাদকের মামলায় দুই হাজার ১৩ আসামি গ্রেফতার হয়। আগ্নেয়াস্ত্র ১৪১টি, গুলি ৭৪৭ রাউন্ড, কার্তুজ ১০৬ রাউন্ড এবং ৮টি ম্যাগজিন উদ্ধার হয়। জেলার ৯ থানায় ১৮১টি অস্ত্র মামলায় ৩২৭ আসামি গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তদন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ হাজার ৮৫১টি মামলা।
বিদেশগামীরা ও ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স’ পেয়েছে সহজে। এ সময়ে ১৬ হাজার ৩৩৪টি ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’ ও তিন হাজার ৩৩৫ জনের চাকরির ভেরিফিকেশন দেওয়া হয়। ৩৬ হাজার ৬৮৩টি ‘পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন’ দেয় জেলা পুলিশের বিশেষ (ডিএসবি) শাখা।
তথ্যে আরো দেখা যায়, পরিবর্তিত নতুন সেটআপে নিয়মিত মামলায় ১৩ হাজার ৭৫৩ এবং ওয়ারেন্টমূলে ২২ হাজার ৯৬২ জন আসামি গ্রেফতার হয়। ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে উপকৃত হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৩৭ জন সাধারণ মানুষ। সাক্ষী হাজির না হওয়ার কারণে মামলা পড়ে থাকে বছরের পর বছর। আদালতে বাড়ে জটিলতা। বিভিন্ন মামলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দক্ষতা ও কৌশলগত কারণে ২৫ হাজার ৫৫০ জন সাক্ষী আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেছে। যে কারণে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেন সংশ্লিষ্ট বিচারক।
এসব সফল কর্মকাণ্ডের বিষয়ে এসপি হাসানুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি নিজের জেলার মানুষ মনে করে কক্সবাজারে সেবা দিতে৷ পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে হয়রানি এবং নির্যাতন করা হয়েছে এমন সংবাদ পাওয়া মাত্রে কাল বিলম্ব না করে আমি ব্যবস্থা নিয়েছি৷
এসপি আরো বলেন, আমি চাকরি কে সর্বোচ্চ সততা, এবং গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি৷ বিশেষ করে পেশাগত দায়িত্ব পালনে যারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ৷