কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালত মাদক মামলায় ৮ জনের ১৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন। সোমবার কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. আব্দুল মান্নান এই রায় প্রদান করেন।
এসময় আদালতে ৮ জন আসামীর মধ্যে ৫জন আসামী স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক ৩ আসামীকে দ্রুত গ্রেফতারে আদালত পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি রাত ৩টার দিকে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মীরের বাড়ী এলাকায় রাজারহাট ডিবি পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় কুড়িগ্রাম থেকে রংপুরগামী একটি ট্রাককে চ্যালেঞ্জ করে পুলিশ। ট্রাকটি ধাওয়া খেয়ে কিছুদূর গিয়ে দাঁড়ানোর সময় ট্রাক থেকে দুইজন দরজা খুলে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ট্রাকের ড্রাইভার হারুনুর রশীদসহ (৩২) ৭টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাকটি (ঢাকা মেট্রো-ট-১৪-৫৯৩২) আটক করে। পরে পুলিশ তল্লাসী চালিয়ে ট্রাকের ভিতর থেকে বিশেষভাবে পলিথিনে মোড়ানো ১০টি গাঁজার প্যাকেট জব্দ করে। যার পরিমান ১২৫ কেজি। আনুমানিক মূল্য ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও জব্দকৃত ট্রাকের মূল্য ৩০ লক্ষ টাকা। ধৃত আসামী জয়পুরহাট জেলার গুলশান মোড় দক্ষিণ বুলু পাড়া এলাকার মৃত: ইউনুছ আলীর ছেলে। পরে তার দেয়া তথ্য মতে পলাতক আসামী একই জেলার খঞ্জনপুর এলাকার বাসিন্দা ও ট্রাক মালিক ফারুক হোসেন (৩৫) ও অপর পলাতক আসামী নওগা জেলার পত্নীতলা মধুইলচক গ্রামের মৃত: আব্দুণ সাত্তারের ছেলে ট্রাকের হেলপার মিন্টু মিয়া (২০)।
এছাড়াও অপর আসামীরা হল শহিদুল ইসলাম (৫২) পিতা মৃত: আক্কাছ আলী, বুজরুখ ভারুনিয়া, তেতুলতলা মোড়, জয়পুরহাট, আয়নাল হোসেন ভাটিয়া (৩৪) পিতা আনছার আলী, বালাতারী ফুলবাড়ী ও একই এলাকার শফিকুল ইসলাম (৩১), পিতা ওছমান গনি, রবিউল ইসলাম (২১) পিতা মো. খোরশেদ আলম দেবালয়, রাজারহাট এবং বাবু মিয়া (২২) পিতা রায়হান মিয়া মলিকারকুটি ফুলবাড়ী। সোমবার জামিনে মুক্ত আসামী ফারুক হোসেন, মিন্টু মিয়া, শহিদুল ইসলাম, আয়নাল হোসেন ভাটিয়া ও বাবু মিয়া আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদেরকে কাষ্টডিতে নেওয়া হয়। অপর পলাতক আসামীরা হলেন, রবিউল ইসলাম, হারুনুর রশীদ ও শফিকুল ইসলাম। তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য বিজ্ঞ বিচারক পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
চার্জশীটে আরও বলা হয়েছে, আসামীরা হিংস্র প্রকৃতির। তারা মাদক ও চোরাচালান চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা ভারতীয় সীমান্ত থেকে গাজার বড় বড় চালান গভীর রাতে ট্রাকের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করে। পরে আসামীদের বিরুদ্ধে ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য আইনের (সং/০৪/ এর ১৯(১) টেবিলের ৭(খ)/২৫ ধারার অপরাধে মামলা করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত ও শুনানী শেষে বিজ্ঞ বিচারক ৮ আসামীকে দোষী সাব্যস্থ করে প্রত্যেককে ১৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরোও এক বছরের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ প্রদান করেন।
রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস.এম আব্রাহাম লিংকন এবং আসামী পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন, অ্যাডভোকেট আশরাফুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট নাজিরুজ্জামান রুবেল।