হিরক খান, মেহেরপুর প্রতিনিধিঃমেহেরপুরের বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি হওয়ায় ঝাঁঝ কমেছে কাঁচা মরিচের। দামে স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন ক্রেতা সাধারণ। গত ২ সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। ২ সপ্তাহ আগেও যে মরিচ ছিল খোলা বাজারে ২০০ টাকা কেজিরও ওপরে এখন তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। মেহেরপুর বড়বাজার তহবাজারে পাইকারি হাটে অবশ্য প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ টাকা কেজি পর্যন্ত। কারণ হিসেবে আমদানি বাড়ায় বাজারে কাঁচা মরিচের দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার সকালে মেহেরপুর বড়বাজার তহবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আশে পাশের স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত ফসন কাঁচা মরিচ বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি হয়েছে। কৃষকেরা খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে দরদাম করে মরিচের মাণের উপর প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করছেন ২৫-২৮ টাকা দরে। সেই মরিচ খোলা বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীরা সাধারণ ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছেন ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে। কেউ কেউ বিক্রি করছেন এরও বেশি মূল্যে।
মেহেরপুর বড়বাজার তহবাজারের মহলদার ট্রেডার্স এর নাসির উদ্দিন জানান, সপ্তাহ ২ আগে কাঁচা মরিচের দাম ছিল খুব চড়া। পাইকারি বাজারেই কিনতে হতো ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি৷ এখন সেই মরিচের সর্বোচ্চ বাজার ২৮ টাকা প্রতি কেজি।
একই বাজারের আরাফাত ভান্ডারের আবু ইমাম জানান, কয়েকদিন পূর্বে ঝালের ঝাঁঝ বেশি থাকলেও এখন তা কমেছে। মেহেরপুর, তাঁরাগুনিয়া, মাগুরা, ঝিনাইদহ ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় কাঁচা মরিচের উৎপাদন বেশি। তাছাড়া ঝড়বৃষ্টি না থাকায় বাজারে কৃষকের উৎপাদিত কাঁচা মরিচের আমদানি বেশি। যেকারণে বাজারদর কম। তবে তহবাজারের অনেক ব্যবসায়ী জানান, ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আসা এবং ঢাকার ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেও মেহেরপুরের কাঁচা মরিচের দাম কমতে পারে।
তহবাজারের লিটন উদ্দীন জানান, বাংলাদেশে কাঁচা মরিচের চাহিদা পূরণে মেহেরপুরের মরিচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি জানান, মেহেরপুরের মরিচ রাজধানী ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, বরিশাল, নিমশা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়ে থাকে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মরিচ চাষি দেলোয়ার হোসেন দেলু বলেন, ১৬ কাঠা জমিতে ৫ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করা হয়েছে। যাতে খরচ হয়েছে ২৩/২৫ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারদরে লোকসান গুনতে হবে।
গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের মরিচ চাষি টুটুল জানান, ১ বিঘা জমিতে ১৮ হাজার টাকা খরচ করে মাত্র ১ হাজার টাকার বিক্রি করেছি। এমন বাজার অব্যাহত থাকলে খরচের টাকাই উঠবেনা।
সদর উপজেলার কোলা গ্রামের জাইদুল জানান, ২ বিঘাতে সবেমাত্র ৬০০ টাকার মরিচ বিক্রি করলাম। ২ বিঘা জমিতে মরিচ চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
একই গ্রামের মিনারুল ও মেহেদী জানান, প্রতি কেজি মরিচ ওঠাতে মজুরি খরচ ১৩ টাকা গুনতে হয়। ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে খরচের টাকা তোলা অসম্ভব। তাছাড়া মরিচের ক্ষেতে সার, কীটনাশক ও সেচ ব্যবস্থা বাকিতে নেওয়া হয়েছে। দোকানীদের টাকা কোথা থেকে আসবে? এমতবস্থায় ছেলেমেয়ে নিয়ে বিপদে রয়েছি। মনে হচ্ছে সংসার চালাতে ব্যাংক থেকে লোন নিতে হবে।
সোনাপুর গ্রামের আমীর হামজা জানান, কাঁচা মরিচের দাম অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। তবে এর সঙ্গে যদি অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমে যেতো তাহলে সাধারণ মানুষ অনেকটাই স্বস্তি ফিরে পেতো।
মেহেরপুর বড়বাজার তহবাজারে আসা দূরের পাইকাররা জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মেহেরপুরের কাঁচা মরিচ কিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেতে পরিবহন খরচ অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। তাই ওই সব বাজারে মরিচ এখনও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
অনেকেই মরিচের দাম কমার কারণ হিসেবে বলছেন, ভারত থেকে প্রচুর কাঁচা মরিচ আমদানি হচ্ছে। এভাবে আমদানি থাকলে সামনের দিন গুলোতে দাম আরও কমতে পারে। তবে কাঁচা মরিচের মূল্য প্রতি কেজি ৫০/৬০ থাকলে কৃষক ও ব্যবসায়ী সকলের জন্যই ভালো বলেও তিনারা জানান।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসরিন পারভীন জানান, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ২ হাজার ২’শ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচ চাষ হয়েছে। কৃষি অফিস মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করছেন।