মোঃ কামাল হোসেন খাঁন,মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
গাংনীর বাওট বাজারে আশা এনজিও অফিসের কর্মচারী হৃদয় নিখোঁজের জট খুলতে শুরু করেছে। হৃদয়কে খুন করে গুম করার অভিযোগে ম্যানেজারকে গণপিটুনি দেওয়ার আগের দিন হৃদয় নিজেই বামন্দীর একটি ডায়গনস্টিক থেকে এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করেছিলেন হৃদয়। সেই রক্ত তার আত্মীয় কিংবা পরিবারের কাউকে দেওয়া হয়নি। এই রক্ত অফিসে ছিটিয়ে হত্যাকাণ্ড বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে হৃদয় ? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজছে পুলিশ।
অপরদিকে আশা ম্যানেজারকে গণপিটুনি দেওয়ার ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবিও বেশ জোরালো হচ্ছে।
গেল গত ২ অক্টোবর সকালে গাংনীর বাওট আশা অফিসের মধ্যে রক্তের ছাপ ও রক্ত মাখা বটি দেখে হৃদয় হত্যা ও গুম করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন হৃদয়ের পরিবার। অভিযোগের প্রেক্ষিতে অতি উৎসুক কিছু মানুষ আশা বাওট শাখা ম্যানেজার আমিনুলকে গণধোলাই দেয়। মুমূর্ষ অবস্থায় ম্যানেজারকে উদ্ধার করে পুলিশ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হৃদয় নিখোঁজ রহস্য সৃষ্টির আগের দিন হৃদয় বামন্দীর ডায়গনস্টিক সেন্টারে গিয়ে নিজের শরীর থেকে এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে আশা কর্মচারী হৃদয়। মেহেরপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি তার বড় বোনের জন্য রক্ত পাঠাতে হবে বলে দাবি করেছিলেন নিখোঁজ হওয়া হৃদয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারের টেকনোলজিস্ট জাহিদ হাসান রাজা বলেন, বাওট আশা অফিসের ম্যানেজারকে গণধোলাই দেওয়ার আগের দিন সকালে হৃদয় আমাদের প্রতিষ্ঠানে আসে।
সাথে রক্তের ব্যাগ ও সিরিঞ্জ ছিল। তার বড় বোনের জন্য মেহেরপুর সদর হাসপাতালে রক্ত পাঠাতে হবে দাবি করে এক ব্যাগ রক্ত টেনে দিতে বলে। তার শরীর থেকে রক্ত টানা হয়। হৃদয় সেই রক্তের ব্যাগ নিয়ে ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
এলাকার বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, বাওট আশা অফিসের সেদিনের ঘটনার পর থেকেই নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মনে। সকালে হৃয়দের পরিবারের লোকজন কান্নাকাটি করতে করতে অফিসে আসে।
অফিসের ভেতের মেলে রক্তের ছাপ ও রক্তমাখা বটি দেখতে পায় । কিন্তু অফিসের তালা খুলে কোন মরদেহ বা আহত কোন ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যা থেকে হৃদয় বাড়ি থেকে নিখোঁজ। আবার অফিসের চাবি হৃদয়ের কাছেও রয়েছে এক সেট। তাহলে হৃদয় যে কোন সময় অফিসে প্রবেশ করতে পারে এটাই স্বাভাবিক। তাহলে বামন্দীর ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিজের শরীর থেকে যে রক্ত সংগ্রহ করেছিল তা ই কি ছিটানো হয়েছিল আশা অফিসে ? এমন প্রশ্ন এখন এলাকার মানুষের মাঝে বেশ আলোচনা হচ্ছে।
হৃদয় এমন ঘটনা সাজিয়ে ম্যানেজারকে ফাঁসাতে চাইছে ? এমন সমালোচনা এখন এলাকাজুড়ে।
এদিকে আশা ম্যানেজারকে গণধোলাই একটি পরিকল্পিত ঘটনা বলেও মনে করছেন এলাকার অনেকে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে বিষয়টি তাদের কাছে আরও স্পষ্ট হচ্ছে। হৃদয় নিখোঁজের সাথে ম্যানেজার জড়িত কি না তা নিশ্চিত হওয়ার আগেই তাকে দেওয়া হলো গণপিটুনি।
আবার ম্যানেজারের বিরুদ্ধে পরিবারের পক্ষ থেকে কোন লিখিত অভিযোগও করা হয়নি। এসব বিষয় নিয়ে ধুম্রজাল রয়েই গেছে।
এদিকে নিখোঁজ হৃদয়কে খুঁজে বের করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের একাধিক টিম এ কাজে ব্যস্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক।