মোঃ রেজাউল করিম,ঈদগাঁও,কক্সবাজারঃ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঈদগাঁওতে আজ রাতে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক কেন্দ্র ঈদগাঁও বাজারের প্রায় দোকানপাট বন্ধ করে ফেলা হয়। সারাদিন বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে ব্যবসা- পাতি গুটিয়ে নেয়। দিনের বেশিরভাগ সময়ে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি এবং জোরে বাতাস প্রবাহিত হয়। বাজারে লোকজনের আনাগোনা স্বাভাবিকের তুলনায় কম ছিল। আর সন্ধ্যার পর বাজারে লোকজনের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। অন্যান্য দিন বাজারে প্রচুর মহিলার সমাগম হলেও আজ তেমন মহিলা দেখা যায়নি। কিছু দোকানপাট এবং খাদ্যের দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা সমাগম তেমন ছিল না। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ গুলোর উদ্যোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে মাইকিং করে লোকজনকে সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে অবহিতকরণ করা হয়। তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয় চলে যেতে অনুরোধ করে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ।
বাজারের পান দোকানের কর্মচারী আব্দুল্লাহ জানায়, দিনে মোটেও বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যার আগেই তারা দোকান বন্ধ করে দেয়।
ঈদগাঁও বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পরিষদের নৈশ প্রহরী মধ্যম শিয়া পাড়ার শামসুল আলম জানান, অন্যদিন রাত দশটা থেকে তাদের নৈশকালীন ডিউটি শুরু হলেও বিদ্যুতের অভাবে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় আগেভাগে আজ তাদের ডিউটি শুরু হয়েছে। মাছ বাজার রোডের বাদাম-চনাবুট ব্যবসায়ী শের আলী জানান, মাগরিবের পর থেকে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় তারা বেচাকিনা বন্ধ করে দিয়েছেন।
বাজারের খাঁন বাহাদুর মোজাফফর আহমদ চৌধুরী মার্কেটের পান দোকানদার সুজন জানান , বিদ্যুৎ না থাকায় সারাদিন তার দোকানে প্রচুর মোমবাতি বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি চলেছে কয়েলের বেচাকেনা।
ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ সদস্য আবদুল্লাহ জানায়, সর্বসাধারণকে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে জানান দিতে তারা সারাদিন মাইকিং করেছে।
ঈদগাঁও বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুফিজুর রহমান মুফিজ জানান, দিনভর বিদ্যুৎ না থাকায় তিনি মোবাইলে চার্জও দিতে পারেননি।
বাজারের হাই স্কুলের মোদির দোকানী সসীম জানায়, সন্ধ্যার পরও তার দোকানে প্রচুর বেচাকেনা হয়েছে।
ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন কুলিন কর্নার ব্যবসায়ী ছৈয়দ করিম রাতে ব্যবসা গুটিয়ে অন্যদিনের চাইতে আগেভাগে ঘুমানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল।
মাতবর মার্কেটের হারুন ভাত ঘরে দেখা যায়, অন্যান্য সময়ের তুলনায় গ্রাহক সংখ্যা খুবই কম। তবে পূবাণী হোটেলে বরাবরের মতো রাতেও প্রচুর গ্রাহক দেখা যায়।
পুরো এলাকায় বিদ্যুতের অভাবে পানির মোটর এবং ফ্রিজ নিয়ে দারুন দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। মোবাইলের চার্জ দিতেও ব্যাক পেতে হয় তাদের।
বাজারের নুরুল হুদা মাল্টিমিডিয়ার স্বত্বাধিকারী নুরুল হুদা জানান, বিদ্যুৎ নির্ভর তার প্রতিষ্ঠানটি সন্ধ্যার আগেই বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
বাজারে প্রতিদিন স্থানীয় থানার পুলিশ দল দেখা গেলেও আজ এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি। পুরো বাজারে নিস্তব্ধতা অভ্য তোরে পরিবেশ বিরাজ করতে থাকে। তবে যানবাহনের কিছুটা চলাচল ছিল।
ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নুর ছিদ্দিক জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি কমাতে তার ইউনিয়ন পরিষদ সচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
পোকখালি ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, উপকূলীয় গোমাতলির লোকজন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে স্থানীয় মোহাজের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সাইক্লোন সেন্টার এ আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার এবং গ্রাম পুলিশের সদস্যরা দূর্গত লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয় সরিয়ে নিতে কাজ করছেন। উপকূলীয় এ এলাকায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিং করেন। তবে ঈদগাঁও উপজেলার কোন ইউনিয়নে ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা আহবানের খবর পাওয়া যায়নি।
দিনের প্রচন্ড বাতাস ও ঝড়ো হাওয়ায় বিভিন্ন এলাকার গাছের ডাল পালা ভেঙ্গে যায়। তবে বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি এখনো ঘটে নি।