মোঃ মজিবর রহমান শেখঃ ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে মাঠের পর মাঠ। কৃষকের রঙিন স্বপ্ন দুলছে শিশির ভেজা হলুদ ফুলের পাপড়িতে। উত্তরাঞ্চলের খাদ্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা। এখানকার উৎপাদিত ধান-চাল, ডাল সরিষার আলু, বেগুন, পটোল করলা, মুলা, টমেটো সহ বিভিন্ন সবজির পাশা পাশি, তরমুজ, পেয়াজ, রশুন, আদা, হলুদ, চা পাতা সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। কিন্তু লাগাতার ধান-পাট সহ প্রচলিত কৃষিপণ্যের দাম না পাওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকছেন লাভজনক ফসল সরিষা চাষের দিকে। গেল মৌসুমে স্থানীয় বাজারগুলোতে সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা চলতি মৌসুমে সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী হয়েছেন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী রত্নাই মারাধার গ্রাম এলাকার মাঠে সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে। চলতি মৌসুমে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি সম্পসারণ অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তপন মাহামুদ জানান, চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ১৮৪ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তেলজাতীয় ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে চলতি মৌসুমে উপজেলার এক হাজার ২০০ জন কৃষককে কৃষি প্রণোদনার অংশ হিসেবে বিনা মূল্যে উন্নত জাতের সরিষার বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী রুপগঞ্জ কাশিডাঙ্গী গ্রামের সরিষা চাষি রশিদুল ইসলাম বলেন, কম খরচ, কম পরিশ্রম আর কম সময়ে সরিষা চাষ করা যায় বলে এটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। প্রতি বিঘা জমি থেকে চলতি মৌসুমে ৬-৮ মণ হারে সরিষা পাওয়া যাবে। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ সরিষা ৪ হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। একই গ্রামের কৃষক তফিল উদ্দীন, মতিউর রহমান, মোজাম্মেল হক, সািদুর রহমান জানান, সরিষা আবাদের ফলে আমন ও বোরো ধানের মাঝে উপরি ফসল পেয়ে তাদের লাভ হয়।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, সরিষা চাষ সম্প্রসারণের জন্য কৃষি বিভাগ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সরকারিভাবে প্রায় এক হাজার ২০০ কৃষককে বীজ ও সার সহায়তা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণে সরিষা চাষের উপকারিতা কৃষকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি তেলের দাম বেড়ে গেছে। এ জন্য কৃষকরা আগ্রহী হয়ে এবার বেশি পরিমাণ সরিষা চাষ করেছেন।
এদিকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে মাঠে সরিষার হলুদ ফুলের মেলায় মৌমাছির আনাগোনা শুরু হয়েছে। তা দেখে দর্শনার্থী ও কৃষকদের মন ভরে যাচ্ছে। হলুদ সরিষা ফুলের মাঝে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে দেশে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন।বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তপন মাহামুদ বলেন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে ইতোমধ্যেই সরিষার আবাদ হয়েছে। আরো চাষের জন্য কৃষকরা জমি প্রস্তুত করছেন। আগাম জাতের সরিষা ক্ষেতে ফুলে ফুলে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহে ব্যস্ত। মধু সংগ্রহের সময় মৌমাছি পরাগায়নে সহযোগিতা করে থাকে। জমি থেকে আমন ধান কেটে নেয়ার পর সেই জমিতে আবার সরিষার চাষ করা হচ্ছে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় গত মৌসুমে ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার যে সব জমিতে গত বছর আলুর আবাদ হয়েছে সেসব জমিতে এবার সরিষার আবাদ হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে ৮-১০ মণ সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। আলুর দাম না পাওয়ায় কৃষকরা এবার সরিষা ও ভুট্টা আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও জিয়াখোর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, বিনা-১৪ জাতের সরিষার আবাদ আমরা বেশি করি। প্রতি বিঘা জমিতে উফশী জাতের সরিষার ফলন ১০-১২ মণ পর্যন্ত হয়। বপণের ৭০-৮০ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। সরিষার খৈল গবাদি পশু ও মাছের উৎকৃষ্ট খাদ্য হিসেবে বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ সরিষা সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার দরে বিক্রি হচ্ছে। বালিয়াডাঙ্গী
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হওয়ার আশা করছি। কম খরচে বেশি লাভ ও ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে সরিষা চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে সরিষার দামও ভালো। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।