মোঃ খলিলুর রহমান,সাতক্ষীরাঃ বৈরী আবহাওয়া, পানির সংকট ও মাজরা পোকার আক্রমণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে আমন উৎপাদন। অন্য যে কোন বছরের তুলনায় এবার আমনের ফলন কম হয়েছে। আমন ধানের বাম্পার ফলন হলেও ধানে চিটা হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন উপকূলীয় অঞ্চলের আমন চাষিরা। আর এ কারণে উৎপাদন খরচও উঠছে না চাষিদের। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের অভিযোগ, যথা সময়ে কৃষি অফিসের পরামর্শ না পাওয়া ও সার-সেচ সুবিধার অভাবের কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে উৎপাদন ও মজুত কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া চলতি বছওে ২৪ অক্টোবর দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এ দেশের মোট ৩১টি জেলার আমন ধানের আবাদি জমি নানা মাত্রায় আক্রান্ত হয় বলে সংশৃষ্ট সূত্র জানায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এসব জেলায় আমন আবাদে ব্যবহূত মোট ৮০ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এর বাইরেও বিপুল পরিমাণ আবাদি জমির ধানে চিটা পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। সব মিলিয়ে এবার আমন মৌসুমে চালের কাক্সিক্ষত উৎপাদন পাওয়া নিয়ে বড় ধরনের আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষি খাতসংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, গত ৪১ বছরের মধ্যে এ বছরের জুলাই মাসে (১৭ আষাঢ়-১৬ শ্রাবণ) দেশে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।
কৃষকরা জানান, আমন রোপণের জন্য এপ্রিল-মে মাসের মধ্যেই বীজতলা তৈরির পর মধ্যজুন থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে আমনের চারা রোপণের সঠিক সময়। এরপর আমন রোপণ করা গেলেও তাতে ফলন কম হওয়ার পাশাপাশি পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেশি হয়। যে কারণে এবছর চলতি মৌসুমে আমন ধানে পোকার আক্রমণ বেশি দেখা দিয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলায় ৮৯ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৮৮ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে হাইব্রিড ধান তিন মেট্রিক টন, উফসি ২.৭০ মেট্রিক টন ও স্থানীয় এক দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফলন না হওয়ায় ধান গাছ কেটে বস্তায় ভরে বাড়িতে গরু ছাগলের খাওয়ানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে ধান গাছ তড়িঘড়ি করে কেটে সরিষা চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। শ্যালো মেশিনের পানির বিল, সার ও কীটনাশকের দোকানের বকেয়া পরিশোধ করতে পারবেন না কৃষকরা।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.মোঃ জামাল উদ্দীন জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হচ্ছে। তিনি বলেন দ্রুত ধান কেটে আগাম সরিষার চাষের প্রণোদনার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে কৃষকদের। তা ছাড়া ওইসব জমিতে ইরি ও সবজি চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন মৌসুমি বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আমন আবাদের শুরুতে কিছুটা অনিশ্চিয়তা দেখা দিলেও উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা অর্জিত হবে। যে কারণে জেলা কৃষি খামার বাড়ির পক্ষ থেকে আমন চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।