রাকিব হোসেন,ঢাকাঃ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, পাকিস্তানি শাসকদের লোভ, লালসা, হুমকি, চোখ রাঙানি, মৃত্যু পরোয়ানা কোন কিছুই বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের পথ থেকে টলাতে পারেনি। ১৯৭২ সালে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তির পর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে প্রাক্কালেও বিমানবন্দরে জুলফিকার আলী ভূ্ট্রো বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব করে বঙ্গবন্ধুর সম্মতি আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তার জনগণের স্বার্থবিরোধী কোন প্রস্তাবই মেনে নিবেন না বলে ভূট্রো সাহেবকে সাফ জানিয়ে দেন। কোন পরিস্থিতিতেই বঙ্গবন্ধু আপন নীতি, আদর্শ ও দর্শন থেকে বিচ্যুত হননি।
মন্ত্রী গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে বেসিস আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন এবং নাট্যকার রেজানুর রহমান বক্তৃতা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, চৌয়ান্নের যুক্তফ্রন্ট, বাষট্রির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্রির ছয়দফা, আটষট্রির আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বাংলাভাষার রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠায় এ দেশের লেখক সাহিত্যিক ও উপন্যাসিকদের ভূমিকা অতুলনীয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোস্তফা জব্বার বলেন, মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের মায়েরা –বোনেরা নিজেরা না খেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার দিয়েছেন। নিজেরা গোয়াল ঘরে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের থাকতে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে তাদের চেয়ে বড় মুক্তিযোদ্ধা আর কে হতে পারে। নাটক একটি জাতিকে সঠিক লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে টিএসসিতে পরিবেশিত স্বাধীনতা সংগ্রাম বিষয়ক প্রথম পথ নাটক ‘এক নদী রক্ত’ নাটকের নাট্যকার জনাব মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, মানুষকে আন্দোলিত করতে নাটক যে কতবড় শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে একনদী রক্ত তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ।
ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত বলেন, বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করাই হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথার্থ সম্মান। ‘বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরী জননেত্রী শেখ হাসিনা তার সাড়ে উনিশ বছরের শাসনামলে ডিজিটাল কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছেন। তার হাতকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলকে কাজ করতে হবে।
অসীম কুমার উকিল সাংস্কৃতিক আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস ও বাংলাদেশের ইতিহাস জানানোর বিকল্প নেই।
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিয়ে ভাল বাসেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখার মতো গর্ব করার বিষয় আর কিছু হতে পারে না। আমি আজ যার অনুপ্রেরণায় লেখক হিসেবে দাঁড়াতে পেরেছি তিনি জনাব মোস্তাফা জব্বার বললেন মিলন। তার মতো মানুষ আছে বলেই লেখক সৃষ্টি হয় বলে উল্লেখ করেন ইমদাদুল হক মিলন। তিনি স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, জব্বার ভাই তার সম্পাদিত মাসিক নিপুণ পত্রিকায় গল্প লিখার জন্য তার কক্ষে আমাকে রেখে তালা লাগিয়ে দিতেন, এভাবেই নিপুণের জন্য গল্প লেখা হয়ে যেতো বলে উল্লেখ করেন।
এর আগে ইমদাদুল হক মিলনের গল্প অবলম্বনে রেজানুর রহমানের নাট্যরূপ ও নির্দেশনায় মঞ্চ নাটক ‘নেতা যে রাতে নিহত হলেন’ মঞ্চায়িত হয়। এথিকস নাট্যদলের পরিবেশনায় নাটকটিতে ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি এ দেশের মানুষের ভালবাসার চিত্র উঠে আসে। পিন পতন নীরবতায় দর্শক এক ঘন্টা ১০মিনিটের এই নাটকটি উপভোগ করে অশ্রুসিক্ত হয়।