মোঃ খলিলুর রহমান: আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। ফাগুনের মোহনায় আজ বসন্তবরণের দিন। আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আজ সুন্দরবন দিবস। জরাজীর্ণ শীতের পর বসন্তের আগমনে প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। বাঙালি প্রাণ যখন বসন্ত বরণ করছে ঠিক তখন সম্ভাবনার এক নতুন বাংলাদেশ দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব বাঙালি। এ স্বপ্নকে চেতনায় ধারণ করেই প্রকৃতিতে লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া। বসন্ত অনন্ত সম্ভাবনার ঋতু। প্রেম, বিরহ, মিলন, দ্রোহ-সংগ্রাম, বিজয় আর অনিবার্য নিয়তির পথে নতুন স্বপ্নে পাড়ি দেওয়া এক অধ্যায়ের অনন্য নাম। বসন্ত মানেই চোখ-ধাঁধানো ফুলের সমাহার। ফাল্গুন এলেই কেবলই উঁকি দেয় সে রাঙা সম্ভাবনার সমস্থ দ্বার। এদিনেই সকলকে স্মরণ করে দেয় সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সেই ভূবন বিখ্যাত পঙতিদ্বয় ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক-আজ বসন্ত।’
এদিকে বসন্তের উন্মাদনায় বাতাসে কোকিলের কুহুতান। মাতাল হাওয়ায় কুসুম বনের বুকের কাঁপনে, উতরোল মৌমাছিদের ডানায় ডানায়, নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে উঠবার আভাসে, আমের মুকুলে, পল্লব মর্মরে আর বনতলে কোকিলের কুহুতান জানান দিচ্ছে শীতের রুক্ষ দিনের অবসান: ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারেৃ। বসন্ত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আন্দোলিত করে গেছে। তিনি বসন্ত নিয়ে লিখেছেন অসংখ্য গান-কবিতা। তার অমর সৃষ্টি-‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়।’ বাউল হৃদয় গেয়ে উঠে-‘হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে/ময়ূরের মতো নাচেরে।’ কাজী নজরুল ইসলাম বসন্তের আগমনীতে গেয়েছেন- ‘বসন্ত এলো এলো এলো রে, পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহরে মুহু মুহু কুহু কুহু তানে।’ বাংলার ঘরে ঘরে উচ্চারিত একটি বাউল গান- ‘নারী হয় লজ্জাতে লাল, ফাল্গুনে লাল শিমূল বন, এ কোন রঙে রঙিন হলো বাউল মনৃ মন রেৃ।’ এদিকে আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে। তবে তরুণ-তরুণী শুধু নয়, নানা বয়সের মানুষের ভালোবাসার বহুমাত্রিক রূপ প্রকাশের আনুষ্ঠানিক দিন আজ।
এ ভালোবাসা যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের, তেমনি মানুষে-মানুষে ভালোবাসাবাসির দিনও এটি। কিন্তু শুধু একটি দিন ভালোবাসার জন্য কেন? এ প্রশ্নে কবি নির্মলেন্দ গুণের ছোট জবাব, ভালোবাসা একটি বিশেষ ৭ দিনের জন্য নয়। সারাবছর, সারাদিন ভালোবাসার। তবে আজকের এ দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে বেছে নিয়েছে মানুষ। তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীদের মাঝেও ভালোবাসা দিবস পালিত হচ্ছে। ভালোবাসার উৎসবেমুখর গোটা দেশ। এ উৎসবের ছোঁয়া লাগবে গ্রাম-বাংলার জনজীবনেও। মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেমকথার কিশলয় হয়ে উঠবে পল্লবিত। অনেকের মতে, ফেব্রুয়ারির এ সময়ে পাখিরা তাদের জুটি খুঁজে বাসা বাঁধে। নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে ওঠে। তীব্র সৌরভ ছড়িয়ে ফুল সৌন্দর্যবিভায়। আজ সুন্দরবন দিবস, ভালবাসা দিবসে ভালবাসুন সুন্দরবনকে।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালিত হয়ে আসছে। ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। সে হিসেবে এবার পালিত হচ্ছে ১৮তম সুন্দরবন দিবস। বরাবরের মতো এবারেও সুন্দরবন দিবসের মূল অনুষ্ঠানটি হবে খুলনায়। দিবসটি উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।