কুড়িগ্রামঃ ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে কুড়িগ্রামে সড়ক উন্নয়নসহ চলছে নানা কর্মযজ্ঞ। এরইমধ্যে কুড়িগ্রাম-সোনাহাট স্থলবন্দর ৪ লেন সড়ক, চিলমারী নৌ-বন্দর সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করেছে সড়ক বিভাগ। সম্পন্ন হয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ধাপগুলো। এতে করে বাণিজ্যের নতুন দুয়ার খুলতে যাচ্ছে।
গত ২৭ মার্চ সমঝোতা স্বাক্ষরের পর ২৮ মার্চ কুড়িগ্রামে প্রস্তাবিত ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জায়গা সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন স্বয়ং ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক। সড়ক পথে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ভুটানে গিয়ে যাচাই করেছেন দুই দেশের যোগাযোগ ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাব্যতা।
কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে ধরলা নদীর তীরে প্রায় ২০০ একর জমিতে জিটুজি ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও ভুটানের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হবে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। যেখানে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের। এছাড়াও ভুটানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে সোনাহাট স্থলবন্দর ও চিলমারী নৌবন্দরের সংযোগ থাকায় সড়ক ও নৌপথে বাড়বে দুই দেশের অন্যান্য ব্যবসায়িক সুবিধাও।
প্রস্তাবিত ভুটানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশের বাসিন্দা ফরিদ বলেন, ‘আমরা অপেক্ষায় আছি কখন অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হবে। বর্তমানে আমরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে যাই। যখন অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হবে তখন আর জেলার বাইরে যেতে হবে না। এখানে কাজ করে খেতে পারবো।’
কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাইদুর রহমান বলেন, ‘এই ইউনিয়নে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে শুধু এ জেলা নয়, পাশের জেলারও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। আমরা চাই দ্রুত এটা বাস্তবায়ন করা হোক।’
কুড়িগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহসভাপতি অলক সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ জেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হবে। এতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এখানকার মানুষের ভাগ্যও উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি এই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বাড়বে সোনাস্থল বন্দর ও চিলমারী নৌবন্দরেও। ভারত, ভুটানসহ অন্যান্য দেশে পণ্য আনা-নেয়ায় সুবিধা মিলবে নদী পথেও। এরইমধ্যে জানতে পেরেছি কুড়িগ্রাম থেকে সোনাহাট স্থলবন্দর সড়ক ৪ লেন ও চিলমারী নৌবন্দর সড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা ব্যবসায়ীরা চাই দ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠিত হোক।’
কুড়িগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, চিঠি পেয়ে কুড়িগ্রাম-সোনাহাট সড়ক চার লেনে উন্নীত করণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। প্রক্রিয়া চলছে অন্যান্য সড়ক উন্নয়নের কাজেরও।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ সাংবাদিকদের জানান, ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় প্রাথমিক ধাপগুলো সম্পন্ন হয়েছে। প্রস্তাবিত স্থানের সঙ্গে জেলার সোনাহাট, তোরা স্থলবন্দর ও চিলমারী নদী বন্দরসহ রেল স্টেশন ও পাওয়ার স্টেশনের যোগাযোগ ও সংযোগ ভালো হওয়ায় এখানে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রায় ২০০ একর জমির মধ্যে ১৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। চলমান রয়েছে বাকি ৬৭ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ।
ভুটানের রাজা কুড়িগ্রাম সফরের আগে ১০ মার্চ ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন করেন ভুটানের রাষ্ট্রদূত এইচ ই রিনচেন কুইন্টসির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।
ঐ সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে বাংলাদেশ ভুটান দুদেশই লাভবান হবে। পাশাপাশি কুড়িগ্রাম জেলারও উন্নয়ন হবে।’