মোঃ খলিলুর রহমান , সাতক্ষীরা :: পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বছরের চার থেকে ছয় মাস জলাবদ্ধ থাকে। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে ও সরকারি খালগুলো দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে শত শত মৎস্য ঘের। ফলে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত না হয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে থাকে মাসের পর মাস। সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সরকার ৪৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-২ এর আওতাধীন ১, ২ ও ৬ পোল্ডারের পুনর্বাসন ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ১১০ কোটি ব্যয়ে বেতনা নদী পুনর্খননের কাজ শুরু করে ২০২১ সালের জুনে। ১০ মাস মেয়াদী এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি সাড়ে তিন বছরেও। ফলে বেতনা নদী চলতি মৌসুমেও পানি নিষ্কাশনে ন্যূনতম ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং জোয়ার-ভাটাহীন মরা বেতনায় জমে থাকা পানিতে ডুবেছে ৪০টিরও বেশি গ্রাম। জানা গেছে, বেতনা খননের ১০ মাসের প্রকল্প সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি। প্রকল্পটি নিয়ে যথেষ্ট বির্তকও ছিল। ফলে সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেতনা নদীর বিভিন্ন স্থানে মাঝামাঝি আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে কিছু কিছু অংশ খনন করলেও সেসব বাঁধ যেমন উচ্ছেদ করা হয়নি, তেমনি জোয়ার-ভাটার জন্য বেতনা নদী উন্মুক্তও করে দেওয়া হয়নি। ফলে মরা বেতনা মরাই থেকে গেছে। যার তলদেশ পার্শ্ববর্তী বিলের চেয়েও উঁচু। তাই পানি নিষ্কাশনের কোনো ক্ষমতা বর্তমানে বেতনা নদীর নেই। এছাড়া বেতনা নদী খননে স্থানীয় মানুষের মতামত উপেক্ষা করে পাউবো কর্তৃপক্ষ। ফলে পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বাড়ি-ঘরে পানি ওঠায় অনেকেই ছাড়ছেন এলাকা। ডুবে থাকায় অকেজো হয়ে পড়েছে টিউবওয়েলগুলো। ভেসে গেছে পায়খানা। নেই রান্নাবান্নার জায়গাও। ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ। এতে মানবিক বিপর্যয়ের শংকা দেখা দিয়েছে গোটা এলাকায়। জানা গেছে, সাতক্ষীরা পৌরসভার কামালনগর, ইটাগাছা, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দীপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, রাজার বাগান, মুনজিতপুর, গদাইবিল ও পুরাতন সাতক্ষীরার অধিকাংশ এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ দুই মাস জলাবদ্ধতায় হাবুডুবু খাচ্ছে এসব এলাকার মানুষ। স্থানীয়রা জানান, তাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। টিউবওয়েলগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। ঘর থেকে বের হওয়ার কোন উপায় নেই। অনেকে পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভাড়াবাসায় দিন কাটাচ্ছে। দ্রুততম সময়ে জলাবদ্ধতা দূরীকরণের উদ্যোগ না নিলে এলাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশংকা তার। এদিকে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের বিনেরপোতায় নির্মাণাধীন ব্রিজের পাশে বাঁধ ভেঙে গিয়ে প্লাবিত হয়েছে দুই উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘার মৎস্য ঘের। এতে গোয়ালপোতা, হরিণখোলা, রাজনগর, শিবনগর, নগরঘাটা, রথখোলাসহ অসংখ্য এলাকার হাজারো পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।