মোঃ খলিলুর রহমান সাতক্ষীরা ::
সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার সাদাসোনা খ্যাত অন্যতম রপ্তানি পণ্য হিমায়িত চিংড়ি শিল্প এখন মহাসংকটে। পোশাক শিল্পের পরেই ছিল এই খাতটির অবস্থান। কিন্তু করোনার ধাক্কা, নানা কারণে উৎপাদন কমে যাওয়া, একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশে উৎপাদিত চিংড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি। গত ৭ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে রপ্তানি। ফলে বিগত দিনে খাতটি দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও বর্তমানে সপ্তম স্থানে নেমে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজার দখল করে নিয়েছে ভেনামি প্রজাতির চিংড়ি। এতে দেশে উৎপাদিত বাগদা ও গলদা চিংড়ির বাজার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০২১ পর্যন্ত এই ৭ বছরে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চিংড়ির দখল ৪ শতাংশ কমে গিয়ে ২ শতাংশে নেমেছে। এই সময়ে ধারাবাহিকভাবে চিংড়ি রপ্তানি ৩৩ শতাংশ কমে যায়।
একই সময়ে চিংড়ির উৎপাদনও ২৮.৩৫ শতাংশ কমে যায়। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) তথ্যমতে, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ৬০ হাজার টন চিংড়ি রপ্তানি হয়েছিল। গত অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৩০ হাজার ৮০০ টন। অন্যদিকে, মৎস্য অধিদপ্তর এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ৪৭ হাজার ৬৩৫ টন হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এতে আয় হয় ৫৫০ মিলিয়ন ডলার। তবে এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে রপ্তানি। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৩৬ টন চিংড়ি রপ্তানি করে আয় হয় ৩৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার। আর গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৮০০ টন চিংড়ি রপ্তানি থেকে আয় হয় ৩৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১.১৫ শতাংশ কম। ইপিবি’র সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আয় ধরা হয়েছিল ৩৩ কোটি ডলার। যদিও এবার রপ্তানি এবং বিশ্ববাজারে চাহিদাও কিছুটা বেড়েছে বলে দাবি রপ্তানিকারকদের। গত বছরের তুলনায় এবার ৮ শতাংশ উৎপাদন বেড়েছে বলে দাবি করছে চিংড়ি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিএফএফইএ। তবে তুলনামূলক এ বছরও চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ; এমনটাও বলছেন তারা।
এদিকে উচ্চ ফলনশীল ভেনামি চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ভাইরাসের ভয়ে যথাসময়ে অনুমোদন না দেয়ায় চিংড়ি রপ্তানিতে পতন ঘটেছে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। এ ছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীরা চিংড়ির ভেতরে তারকাঁটা, শ্যাওলা, সাগু ঢুকিয়ে বাজারজাতের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ফলেই দেশের সম্ভাবনাময় খাতটি ধীরে ধীরে পতনের মুখে পড়ে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে চিংড়ি শিল্পকে পুনরুদ্ধারে ভেনামি চাষের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন চিংড়ি উৎপাদক ও রপ্তানিকারকরা। তাদের দাবি, ভেনামিই চাষে ঘুরে দাঁড়াবে চিংড়ি শিল্প।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম হুমায়ুন কবির জানান, দেশে ভেনামি প্রজাতির চিংড়ি চাষে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এই চিংড়ি উৎপাদন খরচ কম। ইতিমধ্যেই এটির পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই ভেনামি চাষের আবেদন করে আসছি।
অনুমোদন দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি। ইতিমধ্যেই ৫ জনকে অনুমোদন দিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
বিএফএফএ’র সাবেক সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন বলেন, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ চিংড়ি পাওয়া গেছে। ওই বছর চিংড়ি রপ্তানি থেকে সর্বোচ্চ ৫৫০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়। কিন্তু ভেনামি বাজার দখল করায় আর দেশের ভেনামি চাষে অনুমতি না দেয়ায় তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে চিংড়ির উৎপাদন ও রপ্তানি আয় দুটোই কমতে থাকে। এ বছরও একই অবস্থা। ক্রমেই আরও বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে শিল্পটি। এখনই সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভেনামি চাষ না করা গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.