হাজার বছরের 'স্বপ্নের ফেরিওয়ালা' থেকে বাঙালির 'জাতির পিত':
বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এবং বাঙালির আপোষহীন আন্দোলনের মুখে প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচন দিতে বাধ্য হলো নতুন স্বৈরাচার জেনারেল ইয়াহিয়া। এসময় লন্ডন সফরে গিয়ে প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বঙ্গবন্ধু। এবং বিবিসেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের একক বিজয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অবশেষে ১৯৭০ সালের সেই নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে মোট ৩১৩ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন ও প্রাদেশিক পরিষদে ৩১০ আসনের মধ্যে ২৯৮ আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ। জাতিকে শোষণের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখানো বঙ্গবন্ধুর কথার ওপর ভরসা করেই বাংলার গণমানুষ একচেটিয়াভাবে নৌকা প্রতীককে জয়যুক্ত করে।
কিন্তু পাকিস্তানি জান্তারা বাঙালির এই জয় মেনে নিতে অস্বীকার করে। বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মতো একটি বাজে পরিস্থিতে ফেলার অপচেষ্টা চালায়। তবে সতর্ক বঙ্গবন্ধু কোনো ফাঁদে পা না দিয়ে, জনগণকে একাট্টা করতে থাকেন। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চের অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন হঠাৎ করেই স্থগিত ঘোষণা করেন জেনারেল ইয়াহিয়া। ১ মার্চ তার এই ঘোষণার পর উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলার জনগণ। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শুরু হয় দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলন।
৩ মার্চ পল্টনের জনসভায় লাখ লাখ জনতার সামনে 'জাতির জনক' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এরপর ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি ও রণপরিকল্পনা ঘোষণা করেন তিনি। দেশজুড়ে শুরু হয় ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ার প্রস্তুতি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠতে থাকে প্রতিরোধ কমিটি। যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের হাতে চলে যায় শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ভার। বাংলাদেশ চলতে থাকে শেখ মুজিবের কথায়। পাকিস্তানি শাসন কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
অবশেষে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঘুমন্ত বাঙালির ওপর হামলে পড়ে বর্বর পাকিস্তানিরা। সঙ্গে সঙ্গে ২৬ মার্চ প্রথম প্রথম প্রহরে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। সেই রাতে এবং পরের দিনব্যাপী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সেই বাণীর প্রতিলিপি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি দখলদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে আপামর বাঙালি। ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে বিশ্বের বুকে উড়তে থাকে লাল সবুজের স্বাধীন পতাকা। শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিপতি হন বাঙালিরা।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.