ষ্টাফ রিপোর্টার
সৌদিতে ৩ কোটি টাকার সোনা ও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাসহ জেদ্দা বিমানবন্দরে আটক হয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কেবিন ক্রু রুহুল আমিন শুভ।
সৌদি আরবের জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বুধবার (২৬ জুলাই) সকালে ফ্লাইটে উঠার আগ মুহুর্তে তিনি আটক হন। এরপরই বিমানের ফ্লাইট ঘিরে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।
সৌদি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিমানের ঢাকাগামী ফ্লাইট বিজি ৪০৩৬ এর ফ্লাইট স্টুয়ার্ড হিসেবে তার ডিউটি ছিল। বিমানে উঠার আগ মুহুর্তে তারা জানতে পারেন- তার লাগেজে বিপুল পরিমাণ সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রা আছে।
পুলিশের তল্লাশিতে তার ব্যাগ থেকে বেরিয়ে আসে প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের সোনা। পুলিশ এসব সোনার বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা তা দেখতে চাইলে শুভ তা দেখাতে পারেননি। এরপর শুভকে ছাড়াই বিমানের ওই ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশ্যে জেদ্দা বিমানবন্দর ত্যাগ করে। কেবিন ক্রু শুভ আটকের পর বেরিয়ে আসছে সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিমানের ক্যাজুয়াল কেবিন ক্রু থেকে শুভ ভিভিআইপি ক্রু হিসেবেও কাজ করতেন। আর সেই সুবাদে তিনি খুব সহজেই স্বর্ণ চোরাকারবারী করে আসছিলেন। অবশেষে জেদ্দা বিমানবন্দরে আটকের পর একে একে সব তথ্যই বেরিয়ে আসছে। জানা যায়, তৎকালীন ম্যানেজার রঞ্জুর তত্ত্বাবধানে বিমানের ভিভিআইপি কেবিন ক্রু নির্বাচন হতো। তার পছন্দের লোকদের দিয়ে এই কাজ করাতেন। প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছের লোক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সুবিধাও ভোগ করতেন বলে জানা যায়। রঞ্জুর সময় লন্ডনের এক ফ্লাইটে এফ.এস সিনহা তৎকালীন বিমানের ক্যাজুয়াল ক্রু নাবিলা কে ধর্ষন করেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে তদন্ত করে সেটি প্রমাণিতও হয়। এফএস সিনহা তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস.কে সিনহা এর আত্মীয় হওয়ার কারণে সেই বিচার বেশি দূর এগুয়নি। এই রাষ্ট্র বিরোধী বিচারপতি এস.কে সিনহার সুপারিশে ফ্লাইট সার্ভিস ম্যানেজার রঞ্জু এফ.এস সিনহাকে ভিভিআইপি ফ্লাইটে নির্বাচিত করেন।
বিভিন্ন সময় ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে কাস্টমস কর্তৃক আটক হয়ে ট্যাক্স প্রদান করা বহু ক্রুর তালিকা ইতোমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে এসেছে বলে জানা যায়। বিমান কর্তৃপক্ষও অবহিত আছেন। জানা যায়, এদের বিভিন্ন জন এ ধরনের অপরাধ করতে গিয়ে একাধিকবার ধরা পড়েছেন। এরা বিদেশ থেকে কমার্শিয়াল আইটেমসহ বিভিন্ন মেডিসিন ও ড্রাগস দেশে বহন করে আসছিলেন। যারা এসব অপকর্মে জড়িত তাদের মধ্যে সিপি নিশি, জে.পি মুগনি, জে.পি তাইফুর, জে.পি কসমিক, এফ.এস.এস আদিবা, এফ.এস.এস সুলতানা, এফ.এস.এস সুরভী, এফ.এস রাজন, এফ.এস রাফিন, এফ.এস আবু তায়েব, এফ.এস আহসানুল, এফ.এস আকাশ, এফ.এস শেহজাদ, এফ.এস সাদমান, এফ.এস জিয়াদ, এফ.এস.এস তমা, এফ.এস.এস আভা, এফ.এস.এস মায়া, এফ.এস মহিউদ্দিন, এফ.এস সাবাব, এফ.এস আতাহার, এফ.এস শিশির, এফ.এস প্রতিক, এফ.এস.এস মিতু, এফ.এস.এস সাবিহা উল্লেখ্যযোগ্য। কাস্টমস তালিকায় এরা আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত দশজন ক্রু জানিয়েছেন, তাদের দিয়ে এফ.এস আহসানুলের বন্ধু নূর হোসেন নামক একজন ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত ক্রেডিট কার্ড দিয়ে হুন্ডি, ড্রাগস এবং কমার্শিয়াল ব্যবসা করাতে বাধ্য করিয়ে কমিশন নিয়েছে। এই অবৈধ ব্যবসার সাথে এফ.এস ওমর ফারুক নামে এক ক্রু জড়িত ছিলো বলে জানা যায়। ভুক্তভোগী কেবিন ক্রুরা এসব নিয়ে বিমানে লিখিত অভিযোগ করতে চাইলে তাদের কন্ট্রাক্ট রিনিউয়াল হবে না বলে হুমকী এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আহসানুল ও ওমর ফারুক। বিমান ইউনিয়নে সক্রিয়ভাবে নিযুক্ত ক্রু জেপি তাইফুর ও জেপি বিপন বহুবার ড্রাগস এবং গোল্ডসহ ধরা পড়েছেন। উল্লেখ্য যে, জেপি বিপন দুবাই থেকে ঢাকা গামী বিজি০৪৮ ফ্লাইটে ল্যাপটপের ভিতরে গোল্ডের বার আনার সময় দুবাই কাস্টমস কর্তৃক আটক হয় এবং ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। এ সময়ে ইউনিয়ন সভাপতি দস্তগীর ও ম্যানেজার রঞ্জুর সহেযাগীতায় বিষয়টি ধামাচাপা হয় তখনি। তবে এর পূর্বেও জেপি তাইফুর ও জেপি বিপন বিপুল পরিমানে মেডিসিন ও ড্রাগস নিয়ে ধরা পড়ার অভিযোগে চাকুরীচ্যুত হয় । যদিও তারা মামলা করে ফিরে আসেন।
করোনাকালীন সময়ে যখন বিমানের কঠিন সময় যাচ্ছিল তখনো এফ.এস আবু তায়েবের নেতৃত্বে প্রায় ৪০ জন ক্রু ফ্লাইট অপারেট করতে অপরাগতা জানিয়ে বিমানকে চিঠি দেন। পরবর্তীতে বিমান আবু তায়েব গং কে ৪ মাস গ্রাউন্ডেড রাখে।
বিমানের যে ইউনিয়ন রয়েছে সেখানকার কোন্দলের কারণে সাধারন কেবিন ক্রুরা সব সব সময় হয়রানীর স্বীকার হয়ে আসছেন। এর ফলে প্রকৃত অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, তৎকালীন ডি.এ. জিয়াউদ্দিন অত্যন্ত সৎ এবং নির্ভীক হওয়ায় তার সময় এসব অপকর্ম ছিলো না বললেই চলে। তিনি দুদকের মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই আবার মাথাচারা দিয়ে ওঠে অপরাধীরা। ফ্লাইট সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে এর অ্যাসিটেন্ট ম্যানেজার শাকিলের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি এ বিষয়ে সত্যতা আছে বলে জানান। ইউনিয়নের বর্তমান এবং বিরোধী পক্ষে যারা রয়েছেন তারাও এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.