সাইফুর রহমান শামীম ,কুড়িগ্রাম ।। দীর্ঘ এক যুগেও আলোর মুখ দেখেনি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার খেওয়ারচরের রাবার ড্যাম প্রকল্পটি। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো পড়ে থাকা ও দেখভালের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে ৮৫মিটার দৈর্ঘ্যের রাবার ব্যাগসহ ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প। প্রকল্পটিতে সেচ ব্যবস্থা চালু না হলেও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির পকেট কমিটি গঠনসহ দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ উঠছে। তবে এলজিইডির বিরুদ্ধে অপরিকল্পিতভাবে ও নিম্নমানের নির্মাণ কাজের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। রৌমারী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ভারত সীমান্তে ঘেঁষা খেওয়ারচর এলাকায় জিঞ্জিরাম নদীতে ২০১০সালে খেওয়ারচর রাবারড্যাম প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পে সরকারের প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়। প্রথম দফায় ১২কোটি ও দ্বিতীয় দফায় অতিরিক্ত আরও ১কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় হলেও সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন এলাকার ৪’শ কৃষক। সরজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খেওয়ারচর রাবারড্যাম প্রকল্প এলাকায় কৃষকরা শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে সেচ দিচেছন। উপজেলার লালকুড়া খেয়াঘাট হতে তিন কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। সড়কটির বেশিরভাগ এলাকা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রকল্পের সুরক্ষা ও নদী শাসনের জন্য ২কিলোমিটার সিসি ব্লক ও রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। সেতুর দু’পাশের সিসি ব্লক নদীত ধসে গেছে। সেতুর নিচে নদীতে ড্যামের রাবার ফুলানার অভাবে রাবারড্যামের ব্যাগটি নষ্ট হতে বসেছে। প্রকল্পটি দেখভালের জন্য ওই এলাকায় কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রকল্প এলাকার কৃষক আব্দুর রশিদ, নাছিমা খাতুন, নজরুল ইসলাম,মাহবুর রহমান, হাফিজুর রহমান, নুরুল ইসলামসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, সরকার কৃষকদের ভাগ্যানয়নের কথা ভেবে এ প্রকল্পে ১৪ কোটি টাকা খরচ করলেও নানা অনিয়ম-দুরনীতির কারণে প্রকল্পটি আজও চালু হয়নি। এটাতো শুধু এলজিইডি অফিস, ঠিকাদার ও স্থানীয় একটি মহলের লাভ হয়েছে। এরই মধ্যে সমিতির বেশির ভাগ সদস্যকে না জানিয়ে গোপনে কমিটি গঠন করার পায়তারা ও অনিয়ম-দূরনীতির প্রতিবাদে মানববন্ধ করেছে এলাকাবাসী। খেওয়ারচর রাবারড্যাম এলাকার কৃষক আমিনুল ইসলাম অভিযৈগ করে বলেন, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে রাবারড্যামটি বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নির্মাণ কাজে অনিয়ম হওয়ায় রাবার ব্রিজটির দু’পাশে বন্যার সময় ভাঙন দেখা দেয় এবং নিজের বসতবাড়িসহ ওই এলাকার আরও ৩টি বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীর গর্ভে বিলিন হয়েছে। খেওয়ারচর রাবারড্যাম পানি ব্যবসথপনা সমবায় সমিতির অনিয়ম তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, রাবারড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোন উদ্যোগ নিচেছন না। তারা সমিতির সদস্যদের কোনো মতামত ও নেন না। তাদের অবহেলায় প্রকল্পটি আজও চালু হচ্ছে না। নির্মাণ কাজের অনিয়ম তুলে ধরে ওই কৃষক আরও বলেন, সিসি ব্লকের পরিবর্তে ১৫ বস্তা বালুর সাথে ১ বস্তা সিমেন্ট মিশিয়ে নদীর দু’পাড়ের ৩০ মিটার এলাকায় বানানো হয়েছিল। দু’বছরের মধ্যে বস্তাগুলো নদীতে ধসে গিয়ে পাড়ে ভেঙে যায়। খেওয়ারচর রাবারড্যামের পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির (পাবসস) কার্যকরী সদস্য রশিদুল ইসলাম বলেন, এই রাবার ড্যাম প্রকল্পের আওতায় চারশ কৃষক সদস্য রয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় এলাকার প্রায় ১২শ কৃষক ডিজেল চালিত অগভীর নলকূপ বসিয়ে চাষাবাদ করছেন। এতে ফসল উৎপাদনে ব্যয় বাড়ছে। তিনি খেওয়ারচর রাবারড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির (পাবসস) কমিটি গঠনের বিষয় অভিযোগ করে বলেন, সমিতির কার্যালয়ের সোলার প্যানেলের ৭টি ব্যাটারী বিক্রি করেছেন সভাপতি হেলাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম। এ ছাড়াও সমিতির সদস্যদের জমানো টাকা আত্মসাৎ করেন তারা। তাদের এ অপকর্ম ঢাকতে প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে গোপনে পকেট কমিটি গঠন করেন। অভিযোগের বিষয় খেওয়ারচর রাবারড্যাম পাবসস কমিটির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, সোলার প্যানেলের ব্যাটারি বিক্রি করা হয়নি,তা মেরামত করতে দেওয়া হয়েছে। পকেট কমিটি গঠনের বিষয় তিনি বলেন, নির্বাচন না হলেও সমিতির নিয়ম অনুযায়ি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিজেদের অবহেলার বিষয়কে নাকচ করে তিনি বলেন, প্রকল্পের নানা সমস্যার কথা এলজিইডি অফিসে জানানোর পরও কোন প্রতিকার পাচিছনা। খেওয়ারচর রাবারড্যাম প্রকল্পের নির্মাণ কাজের শুরু থেকে কর্মরত রৌমারী উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেজবাহ আলম বলেন, রাবার এলাকার নদীর দু’পাশে যে পরিামাণ বাঁধ নির্মাণ করা দরকার, তা না করায় প্রকল্পটি চালু করা যাচেছ না। বাঁধ নির্মাণ না করে রাবার ফুলিয়ে সেচ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কমপক্ষে ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ করলে এ প্রকল্পের সুফল পাবে কৃষকরা। নির্মাণ কাজে অনিয়ম-দুনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, ওই সময় যে টাকা বরাদ্দ হয়েছিল তা সঠিকভাবে ব্যয় করা হয়েছে। খেওয়ারচর রাবারড্যাম পাবসস কমিটির অবহেলার কথা তুলে ধরে এ কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রকল্পটিকে ঘিরে কোন সমস্যা দেখা দিলে তা দেখার দায়িত্ব ওই সমিতির লোকদের। কিন্তু সমিতির বিগত কমিটির লোকজনের অবহেলার কারণে ওই প্রকল্পে নানা জটিলতা দেখা দিতো। সেতুর দু’পাশের সিসি ব্লক ধসে যাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এটা দেখার দায়িত্বও সমিতির লোকজনের।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.