সাইফুর রহমান শামীম , কুড়িগ্রাম ।। : “দেখ ভাই গাছতে পাকিছে আম, যে আম পড়ে না পড়ে না পড়ে না রে”,। এ রকম হাজারো ছন্দের যাদুকর ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের শল্লীধরা গ্রামের তবারক মিয়ার ছোট ছেলে বাদশা মিয়া। মাত্র ১৫ বছর বয়সে পুথি সাহিত্য (বই পড়া) শুরু করেন। তারপর এটি তার নেশায় পরিনত হয়। ৯ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাড়ী থেকে পালিয়ে বই পড়া দলের সাথে যোগ দেন। গুরু হুজুর অালীর তও্ববোধনে অাস্তে অাস্তে তিনি পুথি সাহিত্য পড়ায় দক্ষ হয়ে ওঠেন। প্রায় ৫০ বছর ধরে উওর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বই পড়ে মানুষকে বিনোদন দিয়ে অাসছেন। এই সময়ে তার নাম হয় বই পড়া বাদশা মিয়া। বয়স হয়ে যাওয়ায় গত কয়েক বৎসর থেকে বই পড়া কমিয়ে দিয়েছেন। তবে ভাল বায়না হলে শিষ্যরা এখনোও তাকে নিয়ে যেতে ভোলেন না। তিন-চার জন মিলে বাতি জালিয়ে সন্ধা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত চলতো তাদের বই পড়া। পুথি ছন্দ্রের সাথে সুর মিলিয়ে নেচে গেয়ে কাহিনীর সাথে মিশে গিয়ে মানুষের মাঝে পরিবেশন করতেন। কখনও কখনও কাহিনী এবং সুরের মোহনীয় অাকর্ষনে রাত শেষ হয়ে দিনের অালো ফুটলেও মানুষ তার ছন্দ এবং কাহিনীর রসে মুগ্ধ হয়ে শুনতো তার বই পড়া । পুথি ছন্দের পাশাপাশি নিজস্ব কিছু ছন্দ দিয়ে পরিবেশন করতেন। মুখে মুখে ছন্দ বানাতে তিনি খুবই দক্ষ। কোন জিনিস এক বার দেখে তাৎক্ষণিক ছন্দ দিয়ে মানুষের মাঝে পরিবেশন করে তাক লাগিয়ে দিতেন। বৈশাখ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত ৬ মাস তাদের বই পড়া ভালো চলতো। অন্য সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক পেলে বই পড়তেন। গাজিকালু -চম্পবতী, ছয়ফুলমুল্লুক – বদিয়ারজামান, গহরবাদশা -বানেছাপরি, এমরান চন্দ্রবান, জামান পাঁচদোলা, তাজেল গোলরায়হান, মদনকুমার সহ বিভিন্ন পুথি সাহিত্যের ছন্দ, সুর, তাল তিনি মুখে মুখেই বলতে পারেন । ইহা ছাড়াও সমাজে নানা ঘটনা, অসংগতির কথাও তিনি তাঁর তাৎক্ষণিক বানানো ছন্দে দর্শকের মাঝে পরিবেশন করতেন। বাদশা মিয়া বলেন সমাজের মানুষের অার্থিক উন্নতি, কর্ম ব্যস্ততা এবং বিদেশী কালচারে অভ্যস্ত হওয়ায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্য পুথি সাহিত্য পড়া এখন অনেক কমে গেছে। তবে সাহিত্য রস পরিবেশন, ছন্দ এবং সরস উপস্থাপনার মাধ্যমে পুথি সাহিত্য এখনও জন প্রিয় করে তোলা সম্ভব।