শিহাবুর রহমান সাকিব, ঢাকা: রমজানে বেশি লাভের আশায় ৫১২ লিটার সয়াবিন তেল মজুত করার অভিযোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে মজুতদার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক কর্মকর্তা লায়েকুজ্জামানকে আটক করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে ৫১২ লিটার সয়াবিন জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশের দাবি, রমজানে উচ্চমূল্যে বিক্রির জন্য ৫১২ লিটার তেল মজুত করেছিলেন লায়েকুজ্জামান।
শনিবার (১২ মার্চ) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার এসব তথ্য জানান।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, লায়েকুজ্জামান প্রকৃতপক্ষে কোনো ব্যবসায়ী নন। তিনি সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও বর্তমানে এলপিআরে রয়েছেন। বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট থেকে বৈধভাবে ৪০ লিটার তেল সংগ্রহ করেন। এই ৪০ লিটার তেলের বৈধ ভাউচার তার কাছে রয়েছে। কিন্তু বাকি তেল তিনি অবৈধভাবে সংগ্রহ করেছেন। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে বৈধভাবে কেনা ৪০ লিটার তেলের ভাউচারের সঙ্গে অবৈধভাবে কেনা তেলের তালিকা নিজে লিখেন।
লায়েকুজ্জামান কেন তেল সংগ্রহ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি তেজগাঁও বলেন, বাজারে মজুত কমে যাওয়ায় কৃত্রিম সংকট তৈরির জন্য তিনি তেল কিনেছিলেন। রমজানে তেলের সংকট থাকবে এবং উচ্চমূল্যে মজুত করা তেল বিক্রি করবেন- এটাই তার আশা ছিল।
ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, লালমাটিয়ার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা লায়েকুজ্জামান। এর পাশেই তার শ্বশুরের বাসাটিও তিনি দেখাশোনা করতেন। ওই বাসায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক এই কর্মকর্তা ব্যক্তিপর্যায়ে গত ৬ দিনে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে বাসায় এই তেল মজুত করেন।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (১১ মার্চ) রাতে ওই বাসা থেকে ৫১২ লিটার তেলসহ লায়েকুজ্জামানকে আটক করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে লায়েকুজ্জামান জানান, তিনি ব্যক্তিপর্যায়ে তেলগুলো কিনে জমা করে রেখেছেন। তার কাছে এসব তেল কেনার রিসিট দেখতে চাইলে তিনি কৃষি মার্কেটের সূর্য এন্টারপ্রাইজের একটি রিসিট দেখান। রিসিট যাচাই করে দেখা গেছে, সেখান থেকে ১৫৯ টাকা দরে মাত্র ৪০ লিটার তেল কিনেছেন। বাকিগুলো তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন। আর সূর্য এন্টারপ্রাইজের ওই রিসিটের মাঝখানে নিজ হাতে বাকি তেলগুলোর পরিমাণ লিখে বিভিন্ন দাম বসিয়ে দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, লায়েকুজ্জামান মনে করেছিলেন যেহেতু বর্তমানে তেলের দাম বাড়তির দিকে, কয়েকদিন পর রমজানে আরও দাম বাড়তে পারে। তাই বাড়তি লাভের আশায় তিনি তেল কিনে মজুত করেন। লায়েকুজ্জামানের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানা বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। রিমান্ডে পেলে তাকে আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে অতীতেও তিনি এমন কাজ করেছেন কি-না, কিংবা তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানা যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, লায়েকুজ্জামান কোনো ব্যবসায়ী বা ডিলারও নন। প্রাথমিকভাবে এটি তার ব্যক্তিগত অসৎ উদ্দেশ্য বলেই মনে হয়েছে। অতিরিক্ত লাভের আশায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে তিনি তেল মজুত করেছেন। ৫১২ লিটার তেল মজুদ করা ফৌজদারি অপরাধ, এটি সংকট সৃষ্টির অপপ্রয়াস।
৪০ লিটার তেল এক দোকান থেকে কিনেছেন, বাকিগুলো কোথা থেকে কীভাবে সরবরাহ করেছেন তা জিজ্ঞাসাবাদে স্পষ্ট হওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব কুমার বলেন, কৃষি মার্কেটের ওই ব্যবসায়ী কেন একজনের কাছে একবারে ৪০ লিটার তেল বিক্রি করলেন এ বিষয়ে ব্যবসায়ীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করব। এছাড়া ভোজ্যতেলের এই সংকট সৃষ্টিতে ব্যবসায়িক পর্যায়ে কেউ মজুতদারি করছে কি-না, প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। এ ধরনের সংবাদ পেলেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
গত ৬ মার্চ থেকে ছয় দিনে লায়েকুজ্জামান বিপুল পরিমাণ তেল মজুত করেছেন জানিয়ে ডিসি বলেন, ৪০ লিটারের বাইরে বাকি তেলগুলো কোথা থেকে কিনেছেন এ বিষয়ে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। কারণ অন্য জায়গা থেকে কিনলে সেটার রিসিট থাকত।
জনসাধারণকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এ ধরনের মজুতদারি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.