মোঃ কামাল হোসেন খাঁন, মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
মেহেরপুরে ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করেছেন কৃষকরা। নারী পুরুষ সকলে মিলে মেতেছেন ভুট্টা কাটা-মাড়াইয়ের মহোৎসবে।
মেহেরপুরের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সবুজ পাতা শুকিয়ে এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে বাঁশ পাতা রঙের ভুট্টা গাছ। চলছে কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর অবধি চোখে মেলে ভুট্টা কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। কেউ মাঠে কেউ বা বাড়ির সামনে কিংবা আঙ্গিনায় মাড়াই করছে তাদের আবাদকৃত ভুট্টা। উৎপাদন বেশি ও খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় ভুট্টা চাষে লাভের আশা করছেন মেহেরপুরের কৃষকরা।
অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষ বেশি হয়েছে এ জেলায়। মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর, গাংনী উপজেলায় ৬ হাজার হেক্টর ও মুজিবনগর উপজেলায় ১ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন জানান, যদিও গাংনী উপজেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ করা হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।
তিনি বলেন, শুধু উৎপাদন বাড়ানো নয়, মাটির উর্বরতা যেন ঠিক থাকে এবং চাষিরা যাতে পরিকল্পিতভাবে ভুট্টার আবাদ করতে পারে সেদিকেও নজর রাখা হয়েছিল। এছাড়া ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টাতে পুষ্টিমান বেশি। এতে প্রায় ১১ভাগ আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে। আমিষে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমাণে আছে। এছাড়া হলদে রংয়ের ভুট্টা দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ থাকে।
মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে কৃষকরা জানান, ধান চাষের পর গম এর পাশাপাশি ভুট্টা চাষটা বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। কারণ ভুট্টা চাষে লাভ বেশি। ভুট্টার দানা মানুষ ও গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতাও উন্নত মানের গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। একই সাথে অনেকগুলো সুবিধার কারণে ভুট্টা চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া জেলায় গবাদিপশুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ভুট্টার ভূমিকা অপরিহার্য।
মেহেরপুর জেলার ময়ামারী, ঝাঁউবাড়ীয়া, দক্ষিণ শালিকা, হরিরামপুর, রঘুনাথপুর, তেরঘরিয়া, কোলা, তারানগর, জয়পুর, মোনাখালী,বর্শিবাড়িয়া, হাসানাবাদ, বারাদী,দরবেশপুর, আশরাফপুর, সাহারবাটী, ভাটপাড়া, নওপাড়া, মাইলমারী, হিন্দা, হিজলবাড়ীয়া, মালশাদহ, পলাশীপাড়া, তেঁতুলবাড়ীয়া, ধানখোলা, কাজীপুর, করমদী, শ্যামপুর, হিজুলী, কুলবাড়িয়া, রামকৃষ্ণপুর, হাড়াভাঙ্গা, শুভ রাজপুর ও ফতেহপুরসহ প্রায় সকল গ্রামের কৃষকরাই অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ভুট্টা চাষ করে আসছে। উচ্ছ ফলন, বেশি লাভ আর চাহিদা অনেক থাকায় সম্প্রতি বছরগুলোতে ভুট্টা চাষাবাদ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তাই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ভুট্টা ক্রয় করেছেন।
কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা বীজ বিতরণের জন্য বিভিন্ন বীজ ভান্ডাররাও এগিয়ে এসেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে আড়াই থেকে ৩ কেজি বীজ প্রয়োজন পড়ে এবং ৫০ থেকে ৬০ মণ ফলন হয় বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।তবে এবছর প্রতি বিঘা জমিতে ৪০ থেকে ৫০ মন ভুট্টা হচ্ছে বলেও কৃষকরা জানান। এবছর ফলন কম হওয়ার কারণ হিসেবে কৃষকরা জানান, সম্প্রতি ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ভুট্টার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। অন্যথায় বাম্পার ফলন পাওয়া যেতো বলে একাধিক কৃষক জানান।
কৃষকরা আরও জানান, স্থানীয় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে ভুট্টাচাষের জন্য। বিভিন্ন সময়ে নানা ভাবে পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, চলতি রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে জেলার ৩ টি উপজেলার ৫ হাজার ভুট্টা চাষির মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ প্রদান করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা তাদের ফসলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি-খন্দকার গোলাম মওলা নকশেবন্দী। সম্পাদক/প্রকাশক-রবিউল ইসলাম। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক-সাবিহা প্রমানিক। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ ধানমন্ডি শংকর ঢাকা-১২০৯, মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪, ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩, ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com ।