উজ্জ্বল কুমার দাস, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি :
কতৃপক্ষের সঠিক ব্যাবস্থাপনার অভাবে পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে খোলা পুকুরের পানি খাওয়ানো হচ্ছে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের। ডায়রিয়া রোগী ছাড়াও অন্যান্য রোগীরা পানি সংকটের কারনে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
শুধু পানির সমস্যা তাই নয় রয়েছে নানা অব্যাবস্থাপনা।এছাড়া হাসপাতালে কোন মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট ল্যাব না থাকায় কোন রোগীর ল্যাব টেষ্ট হচ্ছে না।এনালগ এক্সরে মেশিন বয়সের ভারে নিজেই অসুস্থ্য হয়ে আছে।জেনারেটর টি তেল সংকট সহ নানা সমস্যায় বন্ধ রয়েছে বহুদিন ধরে ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলে নেই বিকল্প ব্যাবস্থা।তাই এতে করে পুরো হাসপাতাল জুড়ে ভুতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়।এমন সংকটের মধ্যে আবার পুরাতন পরিত্যক্ত ভবনে মারাত্মক ঝুঁকিতে চলছে চিকিৎসা।এখানেই শেষ নয় নতুন ভবনেও দেখা দিয়েছে ফাটল।হাসপাতালের কোথাও নেই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার চিহ্ন মাত্র।বাহিরের আসপাশ সহ ভবনের গুরুত্বপূর্ণ যায়গায় অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতার কারনে মশা মাছির বংশ বিস্তার হচ্ছে পাল্লাদিয়ে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ।এতে করে রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সহ নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির আশংকা করা হচ্ছে।হাসপাতালে কর্মরত কিছু কিছু কর্মকর্তার ব্যাবহার সন্তোষ জনক নয়।রোগীর খাবারের মান নিয়েও আছে প্রশ্ন। এমন হাজারো সমস্যায় কচুয়া হাসপাতাল নিজেই অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। এধরনের মারাত্মক সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের উর্ধতন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী সহ সাধারণ মানুষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কচুয়া উপজেলার ১ লাখ ১৩ হাজার জন সংখ্যার ৮২% মানুষ করোনার ১ ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন। লক্ষাধিক জনগণের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ২৯ জন ডাক্তারের স্থলে টিএইচএ এবং আরএমও সহ মাত্র ১১ জন রয়েছেন। তাদের মধ্য হতে ডা. আল মাসুদ ডেপুটেশনে বাগেরহাট আছেন। ডা. মুনতাহার তাবাসসুম মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। ডা. দেবরাজ অর্জিত ছুটিতে আছেন। আরো বহুবিধ সমস্যা নিয়ে প্রায় অচলাবস্থায় রয়েছে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।রোগীরা পাচ্ছে না প্রকৃত সেবা ফলে আসপাশের বেসরকারি ক্লিনিক সহ দুর দুরান্তে চিকিৎসার জন্য দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে।এতে করে রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি সহ বাড়ছে চিকিৎসা ব্যায়।
এদিকে, বিগত ১৯ এপ্রিল, ২০২০ সালে কচুয়া হাসপাতালের পুরাতন ভবনটির ছাঁদ ভেঙ্গে ঘুমন্ত এক বৃদ্ধ রোগী আহত হন। তারপর স্বাস্থ্য প্রকৌশলী বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী (এইচইডি) মোঃ এনামুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ৩১ শয্যার পুরাতন ভবনটির পুরুষ ওয়ার্ড টি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেন। তারপরেও সেই ভবনে বসে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
মাঠকর্মী ২৫ জনের জায়গায় রয়েছে ১৫ জন। স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদ দুটি শূণ্য রয়েছে। সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকেরা স্বাস্থ্য পরিদর্শকের কাজটি করেন। সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৫ জনের জায়গায় ৪জন আছে। ল্যাব টেকনোলজিষ্টের তিনটি পদের সবগুলোই খালি থাকায় রোগীরা কোন সেবা পাচ্ছে না। কোন স্টোর কিপার নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোগীরা বলেন, ‘বাঁচার আশায় হাসপাতালে আইসে তো এহন মরার জো হইছে। হাসপাতালে আইসে দেহি হাসপাতাল নিজেই অসুস্থ্য। তবু ভয়ে ভয়ে থাকতি হচ্ছে। না জানি কহন পুরো ভবন ভাইঙ্গে মাথার উপর পড়ে!’ হাসপাতালের পুরাতন পরিত্যক্ত ভবনের ছাদ ও দেয়ালের পলেস্টার খসে খসে পড়ছে বলে তারা জানান। হাসপাতালের সামনের পুকুর হতে পাইপের মাধ্যমে ফিল্টার বিহীন ভাবে পানি দেয়া হচ্ছে। তাও থাকে একবেলা।পর্যাপ্ত ঔষধ থাকার কথা বলা হলেও রোগীরা বলছে ভিন্ন কথা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নিয়াজ মোস্তাফি চৌধুরী জানান, ‘জায়গার সংকুলান ব্যবস্থা না থাকায় পুরাতন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই সেবা দেয়া হচ্ছে। ভবনের সমস্যার বিষয়াদি স্বাস্থ্য প্রকৌশলী বিভাগে একাধিকবার চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। প্রতিদিন ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে পানির সংকট মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। আগে ওয়ার্ল্ড ভিশন নামে একটি এনজিও ১টি পানির ফিল্টার সরবরাহ করেছিল।তার ব্যাটারী চুরি হয়ে যাওয়ার পর বর্তমানে সেটি তারা আর সংস্কার না করার ফলে সমস্যা হচ্ছে।পুকুুর হতে সাপ্লাইয়ের পানির ব্যবস্থা আছে। ডায়রিয়া মোকাবেলার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।
এমন অবস্থায় কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কি ভাবে দীর্ঘ সময় এভাবে পরে আছে তা সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য নয়।এ থেকে দ্রুত উন্নতি ঘটিয়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সহ সর্বস্তরের জনগণ।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.