সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম :
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমের ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে । তবে ঠিক এসময়ই ধান ক্ষেতে ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইড (বিএলবি) ও ব্লাস্ট রোগের হানায় ফসল হানিতে দিশেহারা অবস্থা চাষিদের।
ফসলকে ঘিরে কতই না স্বপ্ন ছিল কৃষকের । কেউ ধান কেটে ব্যাংকের ঋণ বা ধার-দেনা পরিশোধ করবেন। কেউ ধান বিক্রির টাকায় ধুমধাম করে ছেলে বা মেয়ের বিয়ে দিবেন। আবার কেউ ধান বিক্রির টাকায় ছেলে-মেয়ের বায়না পূরণসহ পরিবারের জন্য কেনাকাটা করবেন। যাদের নিজস্ব আবাদি জমি নেই, অন্যের জমি বর্গা নিয়ে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন, উৎপাদিত ধানে পরিবারের সদস্যদের দু'বেলা খাবারের নিশ্চিত মজুদ হবে। কিন্তু ভেসে গেল চাষিদের সে স্বপ্ন।
দূর থেকে কৃষকের ধান ক্ষেত দেখে মনে হয় ক্ষেতের ধান পেকেছে। কিন্তু ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় উল্টো চিত্র। ধান আছে ঠিকই, তবে ধানে চাল নেই। পাতা পোড়া ও ব্লাস্ট রোগের হানায় পুড়ে গেছে ক্ষেত।আগাম জাতের ব্রি-২৮ ধান চাষ করে ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বহু কৃষক। ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ক্ষেতে গিয়ে কান্নাকাটি করতে দেখা গেছে উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামের মোসলেম উদ্দিন নামের এক ধান চাষিকে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ধানক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ব্রি-২৮ জাতের ধানক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধান শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে।
উপজেলার শাহবাজার থেকে গেটের বাজার সড়কের দু'পাশের কৃষকের ধানক্ষেতে তাকাতেই দেখা য়ায় ব্যাকটেরিয়া জনিত পাতা পোড়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে শত শত বিঘা জমির ধানক্ষেত। আর রোগের হানায় ফলন বিপর্যয় হওয়ার শঙ্কায় আছেন এ অঞ্চলের বহুকৃষক।
উপজেলার ধনিরাম গ্রামের আব্দুল মজিদ বলেন, মানুষের কাছে ধার-দেনা করে ১২ শতাংশ জমিতে ধান লাগিয়েছি। রোগ ধরে সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আবাদ তো শেষ হয়ে গেল। আমরা এখন খাবো কী?
বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামের মুকু মিয়া বলেন, অন্যের কাছে দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছি। হঠাৎ করেই ধান গাছের পাতা ও শীষ শুকাতে শুরু করে। তখন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে তিনি ওষুধ লিখে দেন। সেই ওষুধ জমিতে স্প্রে করেও ফসলের কোনো উন্নতি হয়নি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক বলেন, এবারে প্রতি বিঘা জমি চাষাবাদ করতে ১৩-১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধান মাড়াই করে বিঘায় ২ মণ ধানও পাওয়া যায়নি। ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এখন আমরা সরকারি সহযোগিতা চাই।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ধান ক্ষেতে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের আক্রমণে কিছু ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আক্রান্ত ক্ষেত হতে কৃষকরা কিছুটা কম ফলন পাবেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.