ঠাকুরগাও প্রতিনিধি :
এখন আর কোন চিন্তা নাই বাড়ির কাছে আড়ত বসায়। খেত থেকে মরিচ এনে সরাসরি বিক্রি করে ভাল দাম পাওয়া যায়। আগে খেত থেকে মরিচ তুলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামে আড়তে যেতে ৪-৫ কি.মি এবং শহরে যেতে লাগত ২৫-২৬ কি.মি রাস্তা। এতে গাড়িতে করে আড়তে নেওয়া, আড়তদারদের টোল দেওয়া এবং দর-কষাকষির ঝামেলা বেশি ছিল।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের আড়তে এসব কথা বলেন কৃষকরা।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মহাজনহাট থেকে মধুপুর গ্রাম পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের রাস্তায় মহাজনহাটে দুটি, লালাপুর জঙ্গলবাড়ী গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে একটি, কাঁচনা মধুপুর গ্রামের পুকুরপাড়ে দুটি এবং মধুপুর গ্রামের ভেতরে দুটি স্থানে প্রতিদিন আড়ত বসিয়ে কাঁচা মরিচ কেনাবেচা হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আড়ত বসিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে মরিচ কিনে ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার মরিচ কেনাবেচা হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, খেত থেকে তুলেই ন্যায্যমূল্যে সরাসরি বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে ঘরে ফিরছি। ঝামেলামুক্ত হওয়ায় দিন দিন এসব আড়তে মরিচ বিক্রির চাহিদা বাড়ছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা সরাসরি টাটকা মরিচ কিনে ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে গাড়িতে তুলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে জিম্মিও হতে হচ্ছে না কাউকে। কৃষকরা আরো বলেন, প্রযুক্তি কৃষকের হাতের মুঠোয় পৌঁছে যাওয়ায় নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এমন কার্যক্রম কৃষকদের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
মধুপুর গ্রামের ভেতরে সবচেয়ে বড় আড়ত বসিয়েছেন জয়নুল হক, আজিজুল হক, দুলালসহ পাঁচজন ব্যবসায়ী। তারা জানান, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাদের আড়তে প্রায় ৬ হাজার কেজি মরিচ কেনা হয়। এসব মরিচ বিকেল ৪টার মধ্যে ট্রাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকায়। ঢাকার ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজিতে যা কমিশন দেন, তা নিয়েই আড়তের সবাই খুশি। আজকে প্রতি কেজি মরিচ কেনা হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৭ টাকা কেজি দরে।
মধুপুর গ্রামে বসা আড়তে ২০ কেজি মরিচ ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন ওই গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন। তিনি জানান, এই মরিচ বালিয়াডাঙ্গী কাঁচামাল আড়ত অথবা ঠাকুরগাঁও রোড আড়তে নিয়ে গেলে গাড়িভাড়া ১০০ টাকা এবং আড়তদারকে ৯০ টাকা টোল দিতে হতো। ৩ ঘণ্টার মতো সময় ব্যয় হতো। সময় ও খরচ দুটোই বাঁচছে বাড়ির পাশে ব্যবসায়ীদের কাছে মরিচ বিক্রি করে।
ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ বলেন, ‘বাজারগুলোতে সকালবেলা ৮টার মধ্যেই আড়ত বসে। আমরা মোবাইলে সেখানকার দাম শুনে একই দামে বাড়ির পাশে মরিচ কিনছি। ঢাকার ব্যবসায়ীদের ভিডিও কলে মরিচের কোয়ালিটি দেখানোর পর তারা পরিমাণমতো অর্ডার করছেন। আমরা গাড়িতে করে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
বালিয়াডাঙ্গি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, ‘সীমান্ত এলাকার কৃষকেরাও এখন প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাজারদর জানতে পারছে। বাড়ির পাশে ফসল বিক্রি করে ন্যায্যমূল্যের পাশাপাশি অতিরিক্ত খরচ থেকে বাঁচছে। কৃষকেরা দুই দিক দিয়েই উপকৃত হচ্ছেন।’
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি-খন্দকার গোলাম মওলা নকশেবন্দী। সম্পাদক/প্রকাশক-রবিউল ইসলাম। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক-সাবিহা প্রমানিক। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ ধানমন্ডি শংকর ঢাকা-১২০৯, মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪, ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩, ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com ।