পঞ্চগড় প্রতিনিধি বাংলাদেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড় যেন প্রকৃতির হাতে আঁকা এক নকশিকাঁথা। উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ, দক্ষিণে শস্য-শ্যামল মাঠ, মাঝখানে বয়ে চলা তিস্তা ও মহানন্দা নদী—সব মিলিয়ে এটি এক অপূর্ব প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের আধার। শুধু সৌন্দর্য নয়, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেও সমৃদ্ধ এই জেলা। পঞ্চগড়ের নামকরণ নিয়ে জনশ্রুতি আছে যে, ভিতরগড়, রাজনগড়, দেবনগড়, মিরগড় ও হোসেনগড়—এই পাঁচটি প্রাচীন গড়ের নাম থেকেই ‘পঞ্চগড়’ নামটির উৎপত্তি। এই গড়গুলোর ধ্বংসাবশেষ আজও অতীত ইতিহাসের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরগড় দুর্গ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, যার পরিখা ও স্থাপত্য ইতিহাসপ্রেমীদের আকর্ষণ করে। পঞ্চগড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্য। তেঁতুলিয়ার বিস্তৃত চা বাগান জেলা জুড়ে এক সবুজ স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়। চা গাছের সারি, শ্রমিকদের কর্মচঞ্চলতা এবং প্রক্রিয়াকরণ কারখানা পর্যটকদের জন্য ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা তৈরি করে। শীতকালে পরিষ্কার আকাশে এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার শুভ্র শিখর দেখা যায়, যা সূর্যাস্তের সময় সোনালী আলোয় হয়ে ওঠে অপার্থিব। তেঁতুলিয়ার পুরনো ডাকবাংলো এই দৃশ্য উপভোগের আদর্শ স্থান। জেলার ভূপ্রকৃতি বৈচিত্র্যময়—উত্তরে উঁচু বরেন্দ্রভূমি এবং দক্ষিণে উর্বর সমতল ভূমি, যা কৃষিকাজের জন্য উপযোগী। ধান, পাট, গম, আলু, ভুট্টা, মরিচসহ নানা ফসলের চাষ হয় এখানে। চা শিল্প ছাড়াও পাথর উত্তোলন ও কুটির শিল্প অনেক মানুষের জীবিকার উৎস। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগও রয়েছে। পঞ্চগড়ের মানুষজন সহজ-সরল ও অতিথিপরায়ণ। লোকজ সংগীত, পালাগান, নৃত্য ও ধর্মীয় উৎসব এই জেলার সংস্কৃতিকে প্রাণবন্ত করে তোলে। সিদল ভর্তা, পেলকা ও নানা রকম পিঠা এখানকার খাদ্যসংস্কৃতির পরিচায়ক। পর্যটকদের জন্য পঞ্চগড়ে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। তেঁতুলিয়ার জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতের সীমান্ত দেখা যায়, মহানন্দা নদীর তীরে সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা দুর্লভ, আর রকস মিউজিয়ামে রয়েছে নানা ধরনের পাথর ও খনিজ পদার্থের সংগ্রহ। এছাড়াও ভিতরগড়সহ ঐতিহাসিক গড়গুলো ঘুরে দেখা যায়। জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহর থেকে বাস ও ট্রেনে সহজেই আসা যায়। থাকার জন্য রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি হোটেল ও গেস্ট হাউস। স্থানীয়ভাবে রিকশা, অটোরিকশা ও বাস ব্যবহৃত হয়। পর্যটন উন্নয়নে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের নেওয়া উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি আধুনিক ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাবে, একটি পরিবেশবান্ধব ইকোপার্ক, দেশের সবচেয়ে উঁচু ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড এবং পঞ্চগড় রেলস্টেশনে স্থাপিত দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা। সব মিলিয়ে পঞ্চগড় প্রকৃতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিলনস্থল। যারা প্রকৃতির কাছাকাছি, শান্ত পরিবেশে কিছু সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য পঞ্চগড় নিঃসন্দেহে এক আদর্শ গন্তব্য। একবার ঘুরে গেলে এর সৌন্দর্য মনের গভীরে গেঁথে থাকবে বহুদিন।
প্রকাশক মোঃ রবিউল ইসলাম।
সম্পাদক : মোঃ নাইবুর রহমান [এলএল.বি (অনার্স), এলএল.এম
(ইউডা)] । বার্তা সম্পাদক : মোঃ জাকিরুল
ইসলাম [এম.এ(ইংলিশ), বি আই ইউ। বি.এড (টি টি সি)] অফিস :
২২, পশ্চিম- ধানমন্ডি, শংকর,
ঢাকা -১২০৯, বাংলাদেশ।
ইমেইল নিউজ :editor@alochitokantho.com.bd/ alochitokantho@gmail.com
ভিজিট ওয়েব সাইট : www.alochitokantho.com.bd