নিজস্ব প্রতিবেদক
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজকে সামাজিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে শামসুন্নাহার বেগম ও শাহনেওয়াজ শিশিরের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর উত্তরায় পাঁচতলা বাড়ি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছেন শামসুন্নাহার বেগম। আর এ কাজে তাকে সহায়তা করছেন ওই বাড়ির মালিকানা দাবি করা কানাডা প্রবাসি শাহনেওয়াজ শিশির। এদিকে বাড়ির মালিকানা নির্ধারনের বিষয় আদালতে বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও তারা নানা মহলে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ও অসত্য তথ্য প্রচার করছেন। এতে সামাজিকভাবে চরম বিব্রতকর, অসহায় ও অপমানজনক পরিস্থিতিতে পড়েছে তুরিন আফরোজের পরিবার।
তুরিন আফরোজের আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মূলত অবৈধ পথে না পেরে বাড়ি উদ্ধারে দেশবাসীর সহানুভূতি পাওয়ার জন্য মিথ্যা মারধরের নাটক সাজিয়ে ২০১৯ সালের ২০ জুন সুপ্রিম কোর্ট ল’ রিপোটার্স ফোরামে সংবাদ সম্মেলন করেন তুরিন আফরোজের মা শামসুন্নাহার ও ভাই শিশির। তবে লোক লজ্জার ভয়ে দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও মা ভাইয়ের করা সংবাদ সম্মেলনের জবাব দেননি তুরিন আফরোজ। পারিবারিক বিষয় তিনি প্রকাশ্যে আনতে চান না বলেও জানা গেছে।
এদিকে নানা চেষ্টার পরেও বাড়ির দখল নিতে না পেরে ক্ষোভে ফুসছে শামসুন্নাহার বেগম ও শাহনেওয়াজ শিশির। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে মা ছেলে দুজনেই তুরিন আফরোজকে জড়িয়ে একের পর মানহানিকর বক্তব্য দিচ্ছেন। নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইছেন। অথচ বাড়ির মালিকানার বিষয়ে শক্ত কোন প্রমান দিতে পারেনি তারা। এমনকি তুরিনকে ট্রাইব্যুনাল থেকে অপসারন করতে এবং বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে এমন কোন কাজ নেই যা তারা করেননি।
জানা গেছে, তুরিনের মা শামসুন্নাহার বেগম ১৯৯২ সালে ক্রয়সূত্রে উত্তরার সম্পত্তির মালিক হন। তার ১ সপ্তাহ পরে শামসুন্নাহার বেগম তাঁর স্বামী তসলিম উদ্দিনকে ওই সম্পত্তির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিযুক্ত করেন। যার রেজিস্টার দলিল রয়েছে। ১৯৯৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তসলিম উদ্দিন মেয়ে তুরিন আফরোজকে হেবা (দানপত্র) করেন। তবে শামসুন্নাহার ও তাঁর ছেলে শাহনেওয়াজ আদালতে লিখিত জবাব দিয়ে বলেছেন, তসলিম উদ্দিন কখনো তাঁর মেয়ে তুরিন আফরোজকে উত্তরার সম্পত্তি দান করেননি। অথচ তুরিনের বাবা তসলিম উদ্দিনের স্বাক্ষরিত দলিল এখনো তুরিন আফরোজের কাছে রয়েছে। যেটা তিনি আদালতে সংযুক্ত করেছেন। তবে তসলিম উদ্দিন সম্পত্তির মালিকানা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) তার স্ত্রী শামসুন্নাহার কে কখনো ফেরত দেননি। তা সত্ত্বেও তিনি (শামসুন্নাহার) তার ছেলে শাহনেওয়াজকে উত্তরার সম্পত্তি ১৯৯৭ সালে হেবা দান করেন। বাড়ির মালিক না হয়েও তিনি কিভাবে সন্তানকে সেই সম্পত্তি লিখে দেন তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আইনি ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হলে তুরিন আফরোজের আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল করিম বলেন, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেয়ার পরে যে লোক পাওয়ার পেয়েছে, সে যদি সম্পত্তির ভোগ দখল করেন, তাহলে সম্পত্তির মালিক সেই ভোগদখলকারি হয়ে যায়। তবে অর্পিত পাওয়ারটা কতটুকু দেয়া হয়েছে সেটা জানতে হবে। যদি জমির মালিকানা বন্ধক ও বিক্রির এবং ওই জামির সকল এখতিয়ার ন্যস্ত ব্যক্তির উপর দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিই সম্পত্তির প্রকৃত মালিক বলে বিবেচিত হয়। তখন সে অন্যের কাছে দান বা বিক্রিও করতে পারবেন। এমনকি সে সম্পত্তি ফেরত না দিলে আর ফেরত নেয়াও যায় না। যেহেতু তুরিন আফরোজের মালিকানা নির্ধারনের বিষয়টি আদালতে বিচারাধিন, তাই আদালতই র্নিধারন করবেন কে মালিক।
গত ২০১৭ সালের ২ মার্চ উত্তরা থানায় তুরিনের করা এক সাধারন ডায়েরি থেকে জানা গেছে, ২০০০ সালের পর ঐ জমিতে বাড়ির কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর তুরিন আফরোজ স্থায়ীভাবে বসবাস ও মালিকানা ভোগ করে আসছিলেন। কিন্তু গত ২০১৭ সালের ২ মার্চে তুরিন আফরোজের কানাডা প্রবাসি ভাই শাহনেওয়াজ শিশির সংযুক্ত স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ৩১ মার্চে মধ্যে তুরিনকে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দেন। যেটা হুমকী এবং উত্যক্তকরণ বে-আইনী এবং অসৎ উদ্দেশ্যমূলক। এ বিষয়ে যথাযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের নিমিত্তে তিনি এ সাধারণ ডায়েরি করেন।
এদিকে সুপ্রিমকোর্টে সংবাদ সম্মেলন করে তুরিন আফরোজের মা ও ভাই অভিযোগ করেন ২০১৭ সালের ২ মার্চ বৃহস্পতিবার তুরিন আফরোজ মারধরর করে, পুলিশ, র্যাব ও গানম্যানের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক তাদের মা ছেলেকে উত্তরাস্থ বাড়ি থেকে বের করে দেন।
শামসুন্নাহার বেগম ও শাহনেওয়াজ শিশিরের আনিত অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দেখা যায়, প্রতিদিনের মত ২ মার্চ ট্রাইব্যুনালের কাজ শেষে বিকেলে বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমম্বয় পরিষদের তিন দশক পূর্তি উপলক্ষে সাত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে যোগদানের উদ্দেশ্যে বরিশাল যান তুরিন আফরোজ। তার বরিশালে অবস্থান এবং সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল থেকে ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের কাছে দাপ্তরিক চিঠি ইস্যু করা হয়। ওই চিঠি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এমনকি পরদিন ৩ মার্চ তুরিন বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের তিন দশক পূর্তি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বক্তব্যও রাখেন। যেটা বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। “ইতিহাস বিকৃতকারীদের বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়াতে হবে’’ তুরিন আফরোজ, দৈনিক জনকণ্ঠ ৩ মার্চ। এতে প্রমানিত হয় ২ মার্চ ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে মা ভাইকে মারধর করে বাড়ি ছাড়া করার অভিযোগ ভিত্তিহীন। বরিশালে যাত্রা পথে থেকে তুরিন আফরোজ কিভাবে তার মাকে মারধর করলেন এ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে শামসুন্নাহার বেগমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাওয়া হলে ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজ বলেন, প্রথমে আমি ভেবেছিলাম আমার মা যেটা করেছেন, ভুলে বা কারো প্ররোচণায় করেছেন। সময়ের সাথে সাথে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবেন। আমি পারিবারিক মর্যাদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে অভ্যস্ত। তাই আজ পর্যন্ত এই ব্যাপারে কখনো কোন মিডিয়াতে আমার মা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটাও বিরূপ মন্তব্য করিনি।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.