বিশ্বব্যাংক কেবল সেতু নির্মাণে ঋণ দিতে চায়নি, লিড এজেন্সিও হতে চেয়েছে। আমরা মান ও ব্যয় নিয়ে নিশ্চিত হতে চেয়েছি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান মানসম্পন্ন কাজ করে, কিন্তু টাকা বেশি দাবি করে।
বাংলাদেশ এ দুটি বিষয়ের মধ্যে সমন্বয়সাধনের চেষ্টা করেছে।
এক পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ তোলে এবং ১২০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের অঙ্গীকার থেকে সরে যায়। তবে এ পর্যন্ত তাদের অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের কারণে বাংলাদেশের কয়েকজন জেল খেটেছেন, একজন মন্ত্রী পদ হারিয়েছেন।
আমি মূল্যায়ন কমিটির প্রধান হিসেবে নিশ্চিত করে বলতে পারি, কোন প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা প্রদানের জন্য শেখ হাসিনার সরকারের কেউ কিংবা অন্য কেউ আমাকে বলেনি কিংবা চাপ সৃষ্টি করেনি। তবে ঋণ প্রত্যাহারের পর বাংলাদেশ যখন নিজস্ব অর্থে সেতু নির্মাণের পথে চলে তখন বিশ্বব্যাংক বলছে এত বড় উন্নয়ন প্রকল্প থেকে তাদের সরে যাওয়া ঠিক হয়নি। সেতুটিকে আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের স্টিল লাইফলাইন।
নিজস্ব অর্থে সেতু তৈরি করতে গিয়ে ব্যয় বাড়ল কেন এ প্রশ্ন করা হয়েছিল অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক-এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-জাইকা যখন যুক্ত ছিল তখন ঠিক হয়েছিল কাস্টমস শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধ করবে সরকার। এ হিসাব অবশ্য কাগজে-কলমে। এ কারণে ব্যয় কিছুটা কম দেখা গিয়েছিল। এখন এ অর্থ দেবে ঠিকাদার। তবে তারাও এ অর্থ দেবে সরকারের কাছ থেকে নিয়ে। প্রকৃতপক্ষে আগে প্রাক্কলন করা ব্যয়ের সঙ্গে বর্তমান ব্যয়ের তেমন পার্থক্য নেই। মূল্যস্ফীতির কারণেও ব্যয় বেশি মনে হচ্ছে। নতুন কিছু বিষয়ও যুক্ত হয়েছে প্রকল্পে, যতে ব্যয় বেড়েছে।
নদীর তলদেশের মাটির জটিলতার কারণে মাঝনদীতে ১৪ টি খুঁটি বা পিলারের নিচে একটি করে পাইল বেশি বসানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে খুঁটি সমস্যার সমাধান এবং সে অনুযায়ী নকশা সংশোধন করা হয়েছে।
সেতু ও নদী শাসনের ব্যয়ের বড় অংশ যায় ইস্পাতসহ অনেক ধরনের সরঞ্জাম কেনাকাটায়। এ সব কিনতে হয় চীন, জার্মানি ও অন্যান্য দেশ থেকে।
বিদেশী কনসালট্যান্টদের বেতন-ভাতা দিতে হয় ডলার-ইয়েন-ইউরোতে। ২০০৭ সালে যখন ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা ব্যয় হিসাব করা হয়েছিল, তখন প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৬৮.৬৫ টাকা। ২০১৮ সালে যখন ব্যয় হিসাব করা হয়, তখন প্রতি ডলার পেতে ব্যয় করতে হয় ৮৪.৮০ টাকা ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি।
ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী
পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি-খন্দকার গোলাম মওলা নকশেবন্দী। সম্পাদক/প্রকাশক-রবিউল ইসলাম। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক-সাবিহা প্রমানিক। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ ধানমন্ডি শংকর ঢাকা-১২০৯, মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪, ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩, ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com ।