সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রামঃ বন্যার ধকল সামলে না উঠতেই উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের সবকটি নদনদীর পানি ফের বাড়তে শুরু করেছে। গত ১২ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাড়তে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও তিস্তাসহ সবকটি নদনদীর পানি। ফলে এসব নদনদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে আবারও বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
তবে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যার ঝুঁকি থাকলেও অন্যান্য নদনদী অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির পূর্বাভাস নেই।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে পাউবো জানায়, ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাতের কারণে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা তিস্তা অববাহিকা বন্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এই নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।
তবে বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। তিস্তার পানি বৃদ্ধির হার জেলার অন্যান্য নদনদীর পানি বৃদ্ধির তুলনায় অনেকটাই ধীর। সকাল ৬টায় কাউনিয়া পয়েন্টে এই নদীর পানি বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ১২ ঘণ্টায় এই নদীর পানি প্রবাহ সমতলে মাত্র ২ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
পাউবো জানায়, বুধবার (২৯ জুন) সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ১২ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৩৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার যথাক্রমে ৮৭ ও ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একইভাবে বাড়ছে দুধকুমার নদের পানি।
উলিপুরের সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার কৃষক ইসলাম ও এখলাস জানান, এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি থাকায় কৃষিজমি তলিয়ে গিয়ে তারা অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাড়িঘরের অবস্থাও করুণ। পানি নেমে যাওয়ার পর এখনও বাড়িঘর মেরামত করতে পারেননি। আবারও পানি বাড়তে থাকায় তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
এখলাস বলেন, ‘পানি আবারও বাড়তাছে। ফের বান হইলে আমাগো বাইচা থাকা কঠিন হইবো। কেমনে সামাল দেবো সেটাই ভাইবা পাইতাছি না।’
এসব এলাকার কৃষকরা জানান, চরাঞ্চলে তাদের চিনা আবাদ নষ্ট হওয়ার পর পাট চাষ করেছিলেন। বন্যায় সেই পাটও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। সহযোগিতা না পেলে তাদের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।
জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যাদুর্গতদের জন্য প্রাপ্ত বরাদ্দের মধ্যে ৫৩৮ মেট্রিক টন চাল, ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে; যার সিংগভাগ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং গো খাদ্যের জন্য ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
পাউবোর কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তিস্তা অববাহিকায় বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে। সদরের সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি কিংবা বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে এসব নদনদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.