মোঃ কামাল হোসেন খাঁন,মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রীস্মকালীন উন্নত হাউব্রিড জাতের লাউ চাষ করেছেন এই এলাকার কৃষকরা।চাষে ব্যবহার করেছেন গোবর ও অল্প পরিমাণে সার।বীজ রোপণের দেড় মাস পর থেকে গাছে গাছে ফুল আসে।এর কিছু দিন পর থেকে মোশারেফ হোসেন মুছার লাউ ক্ষেতে শোভা পাচ্ছে লাউ।
লাউ চাষী মুছা জানান,এবছর তিনি ৫০ শতক জমিতে হাইব্রিড জাতের লাউ চাষ করেছেন।শুরু থেকে প্রথম ১সপ্তাহে লাউ বিক্রি থেকে পেয়েছেন ২৫ হাজার টাকা।বাকি সময়ে আরও ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা আসবে বলে ওই কৃষক আশাবাদী।
মুছার লাউ চাষে সফলতা দেখে মেহেরপুরের অনেক চাষী লাউ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।শীতকালীন ফসল হলেও স্বল্প খরচে বেশী লাভজনক হওয়ায় লাউ চাষ বেড়েই চলেছে।বিঘা প্রতি ২০-থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচে হাউব্রিড জাতের লাউ চাষে বিঘা প্রতি জমিতে ৩ লক্ষাধিক টাকা আয় করে মোশারেফ হোসেন মুছাসহ এখানকার অনেক চাষী স্বাবলম্বী হয়েছে।
বর্তমানে মেহেরপুর সদরের ঝাউবাড়ীয়া, কালী গাংনী,শ্যামপুর, আমঝুপি গাংনী উপজেলার নওপাড়া, কসবা ভাটপাড়ার, সাহারবাটি, রংমহল, কাথুলী, হিন্দা,ধানখোলা ইউপির লাউ চাযী ভাটপাড়া গ্রামের হারুন অর রশিদ হারুন বলেন দীর্ঘদিন আমি সৌদি আরবে ছিলাম দেশে এসে বিভিন্ন রকমের সজবি চাযকরে আমার সময় কাঠছে ও ভালো আয় করছি, বাশবাড়ীয়া গ্রামের চাষীদের লাউ চাষে আগ্রহ বেড়েছে।
সরেজমিনে নওপাড়ার জামতলা মাঠে ঘুরে লাউ চাষী আবু তালেব,হানা রিপন জানান,শখের বশে এক সময় বাড়ীতে অল্প জমিতে লাউ চাষ করতাম।লাউ খুব স্বাদের সবজি। সবজি তরকারী হিসাবে লাউ খুব মজাদার নরম সবজি।প্রতিটা পরিবারে লাউয়ের তরকারীর চাহিদা রয়েছে।ফলে বাজারে লাউয়ের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।শীত কিবা গ্রীষ্মকালে সারাবছর বাজারে লাউয়ের চাহিদা থাকে।
লাউ চাষী মহিবুল ইসলাম জানান, আমি মাত্র ৫ কাঠা জমিতে হাউব্রিড ‘উষা’ জাতের লাউ চাষ করে ভাল লাভবান হয়েছিলাম। অল্প জমিতে প্রচুর লাউ ধরেছিল।প্রতি ১ দিন পর পর ৮০ থেকে ১০০ টি লাউ বাজার জাত করেছি।লাউয়ের বাজার মূল্যও ভাল।মুছা মিয়া এবছর দেড় বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছেন।লাউ চাষ লাভজনক হওয়ায় তেমন লোকসান হয়না।জমি থেকে পাউকারীরা ১৫ টাকা থেকে ২২-২৩ টাকা দরে ক্রয় করে নিয়ে যায়।এই লাউগুলো বাজারে-২৫ টাকা থেকে ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে।একই ভাবে স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।লাউ চাষে খরচ তেমন লাগে না।জমি প্রস্তুত, সার, ও জমিতে মাচা তৈরীতে বাঁশের খুটি, সূতা, তার এবং শ্রমিক খরচ সহ বিঘা প্রতি কমবেশী ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়।দেড় বিঘা জমি থেকে প্রতি একদিন পর পর ৫শ’ লাউ বাজার জাত করা হয়।যার বাজার মূল্য ছয় মাসের জন্য এই লাউ জমিতে থাকে।সপ্তাহে দুই বার লাউ বাজার জাত করা হয়।সেই হিসাবে আবাদ শেষে খরচ বাদে দেড় বিঘা জমি থেকে ৩ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা সম্ভাব্য আয় হবে।
একই রকম তথ্য দিলেন সাহারবাটি গ্রাামের লাউ চাষী মোতালেব হোসেন, কিতাব আলী ও তহসিন আলী তারা বলেন, সাহারবাটি গ্রামের অনেকেই লাউ চাষ করে লাখপতি হয়েছেন।হাউব্রিড জাতের লাউয়ের মধ্যে, বুলবলি,উষা, ময়না, আয়না, বাউলা ইত্যাদি জাতের লাউ চাষে চাষীরা লাভবান হচ্ছে।এর মধ্যে উষা ময়না ও বুলবুলি জাতের লাউ আমাদের এলাকায় বেশী আবাদ হয়ে থাকে। এই লাউ গুলো দেখতে নরম, সুন্দর ও সুস্বাদু।এই জাতের লাউয়ে পোকা মাকড়ের আক্রমন কম হয়।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার ডাক্তার এম কে রেজা জানান,লাউয়ের ৯৫ শতাংশই পানি।ফলে নিয়মিত লাউ খেলে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয়।লাউ রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।লাউয়ে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট,যা হার্টের জন্য উপকারী।জন্ডিস ও কিডনির সমস্যায়ও খেতে পারেন লাউ।লাউয়ে খুব কম পরিমাণে ক্যালরি ও প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন জানান,গাংনী উপজেলায় এবছর ৩৫ হেকটর জমিতে হাউব্রিড জাতের গ্রীষ্মকালীন লাউ চাষ হয়েছে।অন্যান্য ফসল যেমন ধান ,পাট,গম, ভূট্টা চাষের পাশাপাশি কম খরচে লাভজনক আবাদ হিসেবে লাউ চাষ প্রতিবছরই বাড়ছে।উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিকট থেকে আধুনিক প্রযুক্তি ও পরামর্শ নিয়ে চাষীরা লাউ চাষে লাভবান হচ্ছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.