বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট), বেলা ১১ টার দিকে গাংনী উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। প্রফেসর আহসান হাবীব এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনডিএম এর কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক জাবেদুর রহমান জনি। প্রধান অতিথি তিনার বক্তব্য বলেন, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আজ আমরা মানববন্ধনের মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, সার, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দাঁড়িয়েছি। সরকার দলীয় মদদে সিমাহীন লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করছে পর্দার আড়ালে থাকা কিছু ব্যক্তি। ২০১০ সালের প্রেক্ষিতে হয়তো কুইক রেন্টাল এর দরকার ছিলো এবং সেই চুক্তি ছিল ৩ বছরের জন্য। কিন্তু সেই চুক্তি এখনো বর্তমান আছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ বছরে প্রায় ৮৭ হাজার কোটি টাকা সরকার প্রদান করেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র একটি কোম্পানীকেই ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রদান করেছে। সরকার দলীয় সাবেক এক মন্ত্রীর ভাই বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও, তিনি সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তিদের একজন। জনগণের কষ্টে অর্জিত টাকা পর্দার আড়ালে থাকা এই সকল কোম্পানীগুলোর মাধ্যমে লুটপাট ও দুর্নীতি করেছে, যার বিচার হওয়া দরকার। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে পরিবহন ভাড়া বাড়ার ঘোষণা দেওয়া লাগেনা, এটা অটোমেটিকই বাড়বে। নিউজে দেখেছি লোকাল ১৬% ও দূরপাল্লার ২২% ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে কিন্তু, বাস্তবে বেড়েছে ৫০% এর বেশি। এমনিতেই বর্তমানে প্রতিটি দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশ চুম্বি, যারফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত জনগণ অতিষ্ঠ। জ্বালানি তেল এমন একটি পণ্য যার প্রভাব প্রতিটি পণ্যের উপর পড়বে। মানুষের যাতায়াত ভাড়ার নৈরাজ্যের চাপে মধ্যবিত্ত মানুষগুলো আজ অসহায়। এর সাথে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়বে। লোডশেডিং, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন কমে যাবে। সুতরাং ব্যাক্তি বা দেশ উভয়ের আয়েও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। অপরদিকে সার ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, এর সাথে যুক্ত হবে পরিবহনের বর্ধিত খরচ। সুতারাং সকল পন্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। আমাদের দেশে তেল ভিত্তিক কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। যদিও অভ্যন্তরীন তেলের দাম বাড়া বা কমার সাথে তার কোন সম্পর্ক নাই, শুধুমাত্র বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে বা কমলে উৎপাদন খরচ বাড়ে বা কমে। মাঝে তেলের দাম বেড়েছিলো, এখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিম্নমুখী। স্পট মার্কেট থেকে কেনার কারণে বাংলাদেশকে সব সময়ই মার্কেট প্রাইস থেকে ব্যারেল প্রতি ৩/৪ ডলার বেশী দামে তেল কিনতে হয়। সেক্ষেত্রে লং টার্ম বেঞ্চমার্ক প্রাইস সব ধরণের লজিস্টিকস (ট্রান্সপোর্ট, হ্যান্ডলিং, স্টোরেজ) সহ ৯০ ডলার ধরলে প্রতি লিটার অপরিশোধিত তেলের কেনা দাম হয় ৫৪ টাকার মত। এর সাথে পরিশোধন, শুল্ক, ভ্যাট এসব যোগ করলেও তেলের দাম ৬৮ টাকার উপরে আসে না। ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে সারা বিশ্ব জুড়ে তেলের ভয়াবহ সংকটেও, গত ৬ মাসে তেলের দাম স্পট মার্কেটেও কখনো ১২৪ ডলারের বেশী বাড়ে নাই। সেখানে বেঞ্চমার্ক প্রাইস কেন ১৭০ এর বেশি ধরা হল সেটাই প্রশ্ন! কয়েকদিন আগে রিজার্ভ সংকট, তেলের মজুদ নিয়ে ব্রিফিং-এ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন “অকটেন আর পেট্রোল আমাদের নিজস্ব গ্যাস প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় বাই প্রোডাক্ট হিসেবে আসে”। তাহলে জ্বালানি তেল এর দাম কেন বাড়লো? মিডিয়ার কল্যানে সারা দেশের মানুষই কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সেই বক্তব্য দেখেছে। যেহেতু অকটেন ও পেট্রোলের সংকট নাই তাহলে দাম বাড়ার প্রশ্নও আসেনা। তাহলে পুরা প্রাইসিং বিষয়টার মধ্যে দুর্নীতির একটা বড় ভুমিকা আছে। জনগণের স্বার্থে সেটা হ্যান্ডেল করা সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের সুযোগে ব্যাংকগুলো ডলারের নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশী দামে বিক্রি করেছে। সারাদেশে আওয়ামী-লীগের বড় বড় নেতা ও শিল্পপতিরা এবং সরকারি আমলারা গোপনে ডলার কিনে জমা রাখছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে এখন ডলারের সংকট। এখন ৯৫ টাকার ডলার ১১৫ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানি করতে তো ডলার কিনতেই হবে। হয়তো এলসি খুলতে গেলেও ডলার কিনতে হচ্ছে ১১৫ টাকায়। এক্ষেত্রে ব্যাংকের ৪০ থেকে ৫০ পয়সা লাভ করার কথা থাকলেও করেছে ১৩ থেকে ২০ টাকা। সাধারণ মানুষজন বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে ডলার পাচ্ছে না। এতোদিন বলেছেন ডলারের কোন সংকট নেই বাংলাদেশে, শ্রীলঙ্কার মত হবে না। এখন আইএমএফ এর প্রেসক্রিপসন অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করেছেন এবং আইএমএফ এর কাছে লোন পাওয়ার জন্য ছুটা ছুটি করছেন। তাই এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দাবী করছি। পরিশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবদেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে যারা দুর্নীতি করেছে তাদের দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অনতিবিলম্বে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি প্রত্যাহার করতে হবে। এসময় মানববন্ধনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাংনী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিরুল ইসলাম অল্ডাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন মাহমুদ। মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে এনডিএম নেতা মোফাজ্জেল হোসেন, রিজভী আহমেদ, গাংনী বাজারের ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলাম সহ এনডিএম এর বিভিন্ন নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2025 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.