মাসুদ রানা,জেলা প্রতিনিধি গাজীপুরঃগাজীপুর মহানগর কোনাবাড়ী কাশিমপুর শিল্পাঞ্চলে তীব্র গ্যাস সংকটের বিষয়টি উদ্বেগজনক। সংশ্লিষ্টদের মতে, চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি বিবেচনায় এটি দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্র গ্যাস সংকট।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাস পাইপলাইনের চাপ ৩ পিএসআইয়ের (প্রেশার পার স্কয়ার ইঞ্চি) নিচে নেমে গেছে। এর ফলে দিনের বেলা বেশিরভাগ কারখানার সকল মেশিন চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে মেশিন বন্ধ রেখেও দিতে হচ্ছে শ্রমিক কর্মচারিদের বেতন ভাতা।
গ্যাসের এই স্বল্পতার কারণে সেখানকার শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল ও নিটিং কারখানাগুলোর সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এসব কারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ না থাকায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতাও এক-তৃতীয়াংশে নেমে গেছে। এর ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
গ্যাস না পেয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান বাধ্য হয়ে ব্যয়বহুল বিকল্প ব্যবস্থায় উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রাখতে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ এতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্যের বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিল্প উদ্যোক্তাদের পক্ষে অনেক প্রতিষ্ঠান চালানো কঠিন হয়ে পড়বে । তাতে কর্মসংস্থান বাড়ার বদলে বেকারত্ব বাড়বে। কাজেই এদিকে দ্রুত দৃষ্টি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
গ্যাসের তীব্র সংকট গত এক- দের মাস ধরে চললেও গাজীপুর-কোনাবাড়ী কাশিমপুর শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও শিল্প উদ্যোক্তারা অভিযোগ করে আসছেন। বস্তুত চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়াই গ্যাস সংকটের কারণ।
গ্যাসের এ তীব্র সংকট দ্রুত নিরসন করা না গেলে অর্থনীতি ও বাণিজ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। শুধু তাই নয়, গ্যাসের অভাবে শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান করাও সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়েও রয়েছে সংশয় প্রতিষ্টানের মালিকদের।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়োজনে সরকারের নীতি হবে শিল্পবান্ধব, এটিই কাম্য। করোনা মহামারির অভিঘাত থেকে দ্রুত উত্তরণে শিল্পক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। দেশি বিনিয়োগকারীরাও যদি প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হন, তাহলে শিল্পায়ন ঘটবে কীভাবে? অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে সরকারকে দেশীয় শিল্পের বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো সমস্যার সমাধান করতে হবে দ্রুত। এ লক্ষ্যে মজুত গ্যাস উত্তোলনে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন মনে করেন ।
এদিকে আবাসিক গ্রাহকদের ও ভোগান্তির কোন শেষ নেই। কোনাবাড়ীর আমবাগ, কুদ্দুছ নগর, হরিণাচালা, বাইমাইল, এবং কাশিমপুরের জরুন, বারান্ডা সারদা গঞ্জ, পুরো এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিতাস গ্রাহকরা। অধিকাংশ গ্রাহকদের গ্যাসের চুলা জ্বলছেনা। আবার কখনো কখনো টিপ টিপ করে জ্বলছে সেটা দিয়ে হচ্ছে না কোন রান্নাবান্নার কাজ। গ্রাহকরা কূল-কিনারা না পেরে অনেকে লাকড়ির চুলার ব্যবস্থা করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্যাস না থাকায় মাটির চুলা ও গ্যাস সিলিন্ডারে রান্না করছে অনেক ভুক্তভোগী।
কথা হয় কাশিমপুর হাজীমার্কট দুদুহাজীর বাড়ির এক জামিলা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, ভোর বেলা থেকেই গ্যাস চলে যায় সারাদিন আর আসেনা। রাত ৯/১০ টা সময় একটু একটু আসতে থাকে। হোটেল থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। সকালে ছেলে মেয়েদের স্কুলে যেতে হয়। অনেক সময় না খেয়েই চলে যায়। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, জানিনা এজ্বালা-যন্ত্রণা কতদিন সয্য করতে হবে।
কাশিমপুর এলাকার মোঃ নূরে আলম জিকু বলেন, গ্যাসের যেমন যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে তেমনি বিদ্যুতের। বোতল গ্যাস কিনতে যেয়ে মাথা নষ্ট হওয়ার অবস্থা ।
গ্যাসের এ দুর্ভোগ কবে কমবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির সাথে গ্যাস না থাকায় রান্নার বিকল্প ব্যবস্থা করতে গিয়ে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকাও। মাস শেষে আবার বিল পরিশোধও করতে হচ্ছে গ্যাস গ্রাহককে।
বারান্ডা এলাকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে গ্যাস নাই। ছেলেমেয়েদের খাওয়া নিয়ে কষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় রুটি কলা খেয়ে সারাদিন থাকতে হয়।
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গাজীপুর জেলার ডিজিএম (অপারেশন) আব্দুল মোমেন তালুকদার বলেন, কালিয়াকৈরের মৌচাকে গ্যাস লাইনে বড় লিকেজ থাকার কারণে লাইন বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি থাকার কারণে মেরামত করতে সমস্যা হচ্ছে, তবে দ্রুতই মেরামত করার চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.