লিটন পাঠান,হবিগঞ্জঃদৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার টানা ১৭ দিনের মতো কর্মবিরতিসহ বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন হবিগঞ্জ জেলার ২৪টি চা বাগানসহ সারাদেশের চা শ্রমিকরা ইতিমধ্যে অনেকের টাকা-পয়সা শেষ হয়ে গেছে। কারও কারও ঘরের খাবার ফুরিয়ে গেছে তবুও অনাহারে অর্ধাহারে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা তবে কোনো কোনো বাগানে কর্মবিরতি শুরু হওয়ার পূর্বের একদিনের বকেয়া মজুরি ১২০ টাকা পরিশোধ করায় কিছু খাবার কিনতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা এ খাবার ফুরিয়ে গেলে পুনরায় খাদ্য সংকটে পড়বেন তারা তবুও ৩শ টাকা মজুরির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জেদ বেঁধে ফেলেছেন সহজ-সরল এসব চা শ্রমিকরা।
অনেক শ্রমিক জানিয়েছেন ৩শ টাকা মজুরির নিচে তাদের সংসার চালানো সম্ভব নয়এর কম মজুরিতে কাজ করলে এমনিতেই অনাহারে অর্ধাহারে সন্তানসন্ততি নিয়ে দিনাতিপাত করতে হবে তাই মরে গেলেও ৩শ টাকা মজুরি ছাড়া মানবেন না! হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসনসহ শ্রম অধিদপ্তর, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সবাই দফায় দফায় চেষ্টা করেও শ্রমিকদেরকে আন্দোলন প্রত্যাহার করিয়ে কাজে যোগদান করাতে পারছেন না শ্রমিকরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কারও কথায় কাজে যোগ দিতে বার বার অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন চা শ্রমিকদের একটাই কথা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে এদেশের নাগরিকত্ব দিয়েছেন।
আমরা কোনো সময় নৌকা ছাড়া অন্য কোনো মার্কায় ভোট দেইনি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মা তিনি ছাড়া আর কেউ আমাদের দুঃখ বুঝবেনা তাই তাঁর কাছ থেকেই আমরা ন্যায্য মজুরির ঘোষণা চাই তাঁর ঘোষণা ছাড়া আমরা কাজে যোগ দেবোনা তারা আরও বলেন, মালিকরা আমাদেরকে ঠকায় প্রশাসন সহ সবাই আমাদেরকে শুধু আশ্বাস দেন। আমরা কারও আশ্বাস আর শুনতে চাইনা আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সিদ্ধান্ত চাই ৩শ টাকা মজুরির দাবিতে শ্রমিকরা গত ৯ আগস্ট থেকে কার্মবিরতিসহ বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ, রেলপথ অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছেন।
গত ১৯ আগস্ট মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন বিভাগীয় শ্রম দপ্তর ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের এক সভায় ১৪৫ টাকা মজুরির সিদ্ধান্ত নেয়া হলে শ্রমিকরা তা প্রত্যাখান করে পরদিন মহাসড়ক অবরোধ করেন সাধারণ শ্রমিকরা না মানায় চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দও শ্রমিকদের সাথে আন্দোলনে থাকেন। ২১ আগস্ট দিবাগত রাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ মধ্যে পুনরায় অনুষ্ঠিত সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গিয়ে ফিরে এসে দুর্গাপুজার আগে মজুরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন এবং এর আগ পর্যন্ত ১২০ টাকা মজুরিতে শ্রমিকরদ কাজে যোগ দেবে মর্মে যৌথ বিবৃতিতে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে শ্রমিকরা ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে দালাল আখ্যা দিয়ে ভ্যালী ও পাঞ্চায়েত কমিটির নেতৃত্বে আন্দোলন চালিয়ে যান।
পরে দফায় দফায় বৈঠক করে শ্রমিকদেরকে বুঝিয়ে কাজে যোগ দেওয়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিরা সর্বশেষ ২৪ আগস্ট চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের হলরুমে লস্করপুর ভ্যালীর ২৩টি বাগানের ভ্যালী ও পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দসহ শ্রমিকদেরকে নিয়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সভা অনুষ্ঠিত হয় ওই সভায় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর কথা ছাড়া আর কারও কথায় কাজে যোগ না দেয়ার ঘোষণা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শ্রমিকরা গত বৃহস্পতিবার (২৫-আগস্ট) হবিগঞ্জ মৌলভীবাজার, সিলেট সহ সারাদেশের চা-বাগানগুলোতে আন্দোলন অব্যাহত থাকার খবর পাওয়া যায়।
লস্করপুর চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রজনী কালিন্দী, বেগমখান চা-বাগানের শ্রমিক নেতা বুদ্ধেশ্বর রাজবংশী ও চান্দপুর চা-বাগানের শ্রমিক নেত্রী বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠনের সভানেত্রী খাইরুন আক্তার গতকাল ২৫ আগস্ট হবিগঞ্জ জেলার ২৪ টি চা-বাগানে আন্দোলন অব্যাহত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এরমধ্যে অনেক শ্রমিক অনাহারে অর্ধাহারে থেকেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মরণপণ আন্দোলন চালিয়ে যাবার জেদ বাঁধার খবর পাওয়া যায় ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ও স্যোসাল মিডিয়ায় কেঁদে কেঁদে না খেয়ে আন্দোলন করার কথা প্রকাশ করেন কোনো কোনো শ্রমিক এ ছাড়া গতকাল লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিক নেত্রী ও উদীচী লাক্কাতুরা চা বাগান শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজল গোয়ালা তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে লিখেন।
চা শ্রমিকদের আন্দোলনকে চলমান রাখতে খাদ্যের প্রয়োজন প্রায় ১৭ দিন তারা আন্দোলন করছেন,শ্রমিক বান্ধব সংগঠন গুলোকে এগিয়ে আসার আহবান জানাই। এদিকে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে খবর প্রচার করা হয় মজুরি নির্ধারণে চা বাগানের মালিকদের নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল শনিবার (২৭-আগস্ট) গণভবনে বসবেন
এ খবরে চা শ্রমিকরা শীঘ্রই তাদের জন্য সুখবর আসবে এমন প্রত্যাশা করছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.