মোঃ মজিবর রহমান শেখঃঠাকুরগাঁও জেলার হাট গুলোতে পাট উঠতে শুরু করেছে। ভালো দামে বিক্রি করতে পেরে কৃষকরা খুশি। বর্তমানে মণপ্রতি পাট বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ৩৩০০ টাকায়। গত বছর ছিল ২২০০ থেকে ৩৬০০ টাকা। শুরুতে দাম ভালো হওয়ায় পাট মৌসুমের শেষের দিকে দাম আরও বাড়বে বলে ধারণা কৃষকদের। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলার হাটে নতুন পাট নিয়ে আসছেন কৃৃষকরা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দর কষাকষি চলছে। এখন হাট-বাজারে পাটের আমদানি বাড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে পাটকলগুলোতে বেড়েছে পাটের চাহিদা। এ কারণে প্রতি হাটেই পাটের দাম বাড়ছে। ভালো দাম পেয়ে খুশি পাট চাষিরা।
ফাড়াবাড়ী এলাকার কৃষক স্বপন দশ মণ পাট বাজারে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, পাটের ভালো দাম পেয়ে আমি খুশি। এ বছর শুরতেই পাটের বাজার ভালো। এবার পাঁচ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে দশ মণ পাট পেয়েছি। পানি সংকটের কারণে জমি থেকে পাট কেটে অন্যত্র জাগ দিতে হয়েছে। এতে খরচ বেড়েছে, অন্যান্য বছর প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষে ১৫ হাজার টাকা খরচ হতো। এ বছর ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তারপরও খরচ বাদ দিয়ে দশ মণ পাটে ১২ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের পাট চাষি মামুন হোসেন বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি কম হয়েছে। তাই খাল বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। উচু জমিতে বেশি পাট হয়। এ পাট কেটে নিচু এলাকার খাল-বিলে জাগ দিতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়েছে। কিন্তু পাটের ভালো দাম পেয়ে এ কষ্ট লাঘব হয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার জলিল হোসেন বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে লাঙল, বীজ, সেচ, কাটা, পরিষ্কার করা ও সার দেওয়াসহ যাবতীয় খরচ হয় ৮-১০ হাজার টাকা। এবার উৎপাদন হচ্ছে ১০ থেকে ১২ মণ। বর্তমানে বাজারে নতুন পাট প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা।
এবার শুরুতে পাটের দাম ভালো হলেও কাটার পর পচাতে দিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে। বর্ষাকালেও তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিল-পুকুরে পানি ছিল না। এর ফলে পাট জাগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছিল। মধ্য শ্রাবণের বৃষ্টিতে সেই সমস্যার কিছু সমাধান হয়েছে। অনেকে সেচ দিয়ে পাট জাগ দিয়েছেন। মাফিজুল ইসলাম এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। অনাবৃষ্টি আর প্রচন্ড খরতাপে পাটগাছ খর্বাকৃতির হয়ে আছে। জমির বেশির ভাগ পাটগাছ পুড়ে মরে যাচ্ছে। জমি বর্গা নিয়ে পাট চাষ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। তার মতো শত শত চাষি এবার পাট চাষ করেছেন। কিন্তু খরায় সর্বনাশ হয়ে গেছে।
আনুমানিক , ঠাকুরগাঁও জেলায় চলতি বছরে পাট আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ১ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় হয়েছে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে, রানীশংকৈল উপজেলায় হয়েছে ৯৫০ হেক্টর জমিতে, পীরগঞ্জ উপজেলায় হয়েছে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে, হরিপুর উপজেলায় হয়েছে ৮০০ হেক্টর জমিতে। ঠাকুরগাঁও জেলায় এবার বিভিন্ন জাতের পাট চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলের কৃষকরা এবার দেশি, তোষা ও মেশতা ছাড়াও উঁচু মাটিতে কেনাফ এইচ বি-৯৫ জাতের পাট আবাদ। বাজারে পাটের দাম ভালো রয়েছে । চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। পানির অভাবে জাগ দিতে কৃষকর সমস্যার সমাধান হয়েছে।
সর্ম্পকিত খবর সমূহ.
November 23, 2024