সারাদেশে

ভুল চিকিৎসায়’ বোরহানউদ্দিনে পঙ্গু হয়ে বিছানায় শিশু তানভীর

মো: নুরনবী (ভোলা) বোরহানউদ্দিন। ভোলার বোরহানউদ্দিনে চিকিৎসক পরিচয়দানকারী স্যাকমো শফিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত চেম্বারে ভুল চিকিৎসায় পঙ্গু হয়ে গেছেন তানভীর নামে আট বছর বয়সী এক শিশু এমন অভিযোগ তুলেছে তার পরিবার।  এ ঘটনায় বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী শিশুর মা ওই স্যাকমোর বিরুদ্ধে ভোলার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। ঘটনার সত্যতা পেয়ে বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশ মামলা রুজু করে। আজ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোরহানউদ্দিন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান। জানাযায়, গত তিন মাস আগে স্যাকমো শফিকুলের ভুল চিকিৎসার কারনে গত (১৫জুলাই ২০২৫) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তানভীরের দুটি হাঁতের কবজি ও একটি পাঁ কেটে ফেলা হয়েছে। শিশুটি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।  অভিযুক্ত চিকিৎসক নামধারী শফিকুলের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।  শফিকুল ইসলাম বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যাকমো হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়া হাসপাতাল সড়কে আকিব মেডিকেল হল ও দেউলা মেডিকেল হল নামে দুটি ঔষধ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ব্যক্তিগত চেম্বার করেন। তানভীর (৮) উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ফুলকাচিয়া গ্রামের কৃষক মোসলেমের পুত্র। তানভীরের বাবা মোসলেম জানান, তানভীর চরমোনাই মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে পড়াশুনা করে। চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল সে ছুটিতে বাড়ি আসে। ২২ এপ্রিল  গায়ে জ্বর আসে,পরের দিন তাকে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে নিয়ে আসলে হাসপাতাল গেইটের সামনে আকিব মেডিকেলের মালিকের সাথে দেখা হয়, ছেলের অসুস্থতার কথা জানিয়ে তার পরামর্শ চাই।  সবকথা শোনার পর আকিব আমাকে তার দোকানের চেম্বারে ছেলেকে নিয়ে যেতে বলে। একজন ভালো ডাক্তার দেখিয়ে দিবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করে, আমি সরল বিশ্বাসে তার দোকানের চেম্বারে ছেলেকে নিয়ে যাই। আকিব শফিকুল ইসলামকে ডেকে এনে আমার ছেলেকে দেখতে বলে। ‘চিকিৎসক শফিকুল ছেলেকে দেখে কিছু টেষ্ট করাতে বলেন। আহছানিয়া মেডিকেল সার্ভিসেস নামে একটি ডায়গনষ্টিকে টেস্ট করানো হয়। টেস্ট শেষে রিপোর্ট দেখে শফিকুল ইসলাম জানায় আমার ছেলের ডেঙ্গু হয়েছে। তিনি এন্টিবায়টিক ইনজেকশন প্রদানের কথা বলেন এরপর একই সাথে চারটি ইনজেকশন প্রয়োগ করেন। ইনজেকশন প্রয়োগের কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে আমার ছেলের গায়ে ছোট ছোট কালো বিচির মত উঠতে থাকে। আমি তাৎক্ষণিক বিষয়টি শফিকুল ইসলাম কে জানালে তিনি আমাকে বলেন এলার্জির জন্য এমনটা হচ্ছে ঠিক হয়ে যাবে’। তিনি ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরে অবস্থার আরো অবনতি হলে তানভীরকে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। ভোলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর তারা বরিশালে নিয়ে যেতে বলেন। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে নেয়ার পর সেখানকার ডাক্তাররা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অক্সিজেনের সাহায্যে তানভীরকে জরুরি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। ঢাকায় নিয়ে প্রথমে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে গিয়ে ডাক্তার দেখাই। তানভীরের শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়ে পড়ায় কিওর স্পেশিয়ালাইজড হাসপাতালের আইসিউতে (ICU) আট দিন ভর্তি রাখি। আইসিইউ থেকে বেড় করে শিশু হাসপাতালে নিয়ে আরো ৯দিন ভর্তি রাখি। শিশু হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রেফার করলে বার্ন ইউনিটে আরো এক মাস দশ দিন চিকিৎসা শেষে ১৮ জুন ছাড়পত্র প্রদান করে। ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তার আমাকে বলেন অস্ত্রোপচার এর মাধ্যমে তানভীরের দুটি হাঁত ও দুটি পাঁ কেটে ফেলতে হবে। পনেরো দিন পরে এসে আবার যেনো ভর্তি করাই।  তিনি আরো জানান, আমি ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে ডাক্তার শফিকুল ইসলাম ও আকিবের সাথে দেখা করে বিষয়টি তাদেরকে অবগত করি। তারা আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাসানোর ভয় দেখায়। আমি দরিদ্র মানুষ আমার ছেলের চিকিৎসা করাতে এই পর্যন্ত প্রায় ৯ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেছে এবং চিকিৎসার জন্য আনুমানিক আরো ৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন কিভাবে টাকা জোগার করবো তা আমি জানিনা।   অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যাকমো শফিকুল ইসলাম জানান, গত তিন মাস আগে তানভীর নামে রোগিকে নিয়ে তার স্বজনরা বিভিন্ন জায়গায়  ঘুরাফেরা করতেছিলো কেউ তাকে চিকিৎসা দেয়নি। পরে তাকে আমি দেখেছি তার সারা গায়ে এলার্জি,ক্রাশ,ফোরার মতো এবং প্রচন্ড জ্বর ও খিচুনি ছিলো। আমি তাকে জ্বরের সিরাপ, জ্বরের সাপোজিটরি ও খিচুনি কমার জন্য সেডিল ইঞ্জেকশন হাপ এম্পুল দিয়েছি যাতে তার খিচুনি না হয়। আমি তাকে শুধু জ্বরের ট্রিটমেন্ট দিয়েছি। তিনি দাবী করেন, তার এমন অবস্থা ছিলো যে তাকে কেউ চিকিৎসা দিতে রাজি হয়নি, তাই তার ভালোর জন্য আমি তাকে চিকিৎসা দিয়েছিলাম। তিনি দাবী করেন তার বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে তিনি কোনো ভুল চিকিৎসা দেয়নি।  বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা.কে.এম.রিজওয়ানুল ইসলাম  জানান, আমাদের এখানে কর্মরত স্যাকমো শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে তানভীরের বাবা একটি অভিযোগ করেছেন। শফিকুল ইসলাম গত ২-৩ মাস আগে হাসপাতালের বাহিরে একটি প্রাইভেট চেম্বারে তানভীর নামে আট বছর বয়সী একটি রোগী দেখেছিলেন, বাচ্চাটা সম্ভবত জ্বর সাথে একটু ফোরার সমস্যা নিয়ে গিয়েছিলো তার কাছে। প্রাথমিকভাবে তারা বাচ্চাটির রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গু সন্দেহ করে। তারা বাচ্চাটিকে একটি সেফট্রিয়াক্সোন এন্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে। আমরা জানি ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ এতে সেফট্রিয়াক্সোন ইঞ্জেকশনের কোনো প্রয়োজন নেই। যতটুকু কাগজপত্র দেখেছি তাতে সন্দেহ করা যায় হয়তোবা সেফট্রিয়াক্সোন দেয়ার ফলে একটা রেয়ার রিএ্যাকশন হয়েছে বাচ্চাটার। ঢাকা মেডিকেল থেকে যে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে সেখানেও তারা সন্দেহ করেছেন, তবে নিশ্চিত করাটা কঠিন। আমি যতটুকু জানি বাচ্চাটা মুমূর্ষ অবস্থায় আছে আমি তার সুস্থতা কামনা করি।

0 Shares

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *