মোঃ মহিউদ্দিন,ভোলা সদরঃমাওলানা আবুল বাশার ১৯১০ সালের জানুয়ারি মাসে হাজিপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আলহাজ মাওলানা আবদুর রহীম (বড় হুজুর)। ছাত্রজীবনের প্রথমদিকে স্বীয় পারিবারিক মাদ্রাসায় কয়েক বছর শিক্ষালাভের পর তিনি ১৯২১ সালে কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং পর্যায়ক্রমে কৃতিত্বের সঙ্গে আলিম, ফাজিল ও কামিল পাস করেন। ছাত্র অবস্থায় তিনি সেখানে ছাত্র সংগঠনের নেতা এবং বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর ছাত্র আমলেই কলকাতা থেকে দিল্লীতে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়। এ সময় তিনি কয়েকজন সহপাঠী নিয়ে মাদ্রাসার খরচে দিল্লী সফর করেন ।লেখাপড়া শেষ করার পর তিনি গ্রামে ফিরে আসেন এবং তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠিত হাজিপুর সিনিয়র মাদ্রাসায় কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি বিজয়পুরের আঃ সোবহান মুন্সীর ৪র্থ কন্যা ফাতেমা বেগমের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তিনি ১৯৩৮ সালের ৩ মার্চে এই মাদ্রাসার সুপার পদে যোগদেন এবং নিরলসভাবে১৯৭০ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন । পরবর্তীতে তিনি মাদ্রাসার রেক্টর পদে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ইসলামী জ্ঞান ও বুজুর্গীর এক মহান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি জৌনপুরী পীর হজরত শাহ্ সূফী হাফেজ মাওলানা হাছনাইন আহমদ-এর আজীবন ভোলা জেলাস্থ খলিফা ছিলেন। দৌলখাঁন ঈদগাহ ময়দান কমিটির তিনি প্রায় ৩৫ বছর সভাপতি ছিলেন । তিনি জৌনপুরী পীর সাহেবদের অবর্তমানে বেশিরভাগ সময় এই ঈদগাতে ইমামতি করতেন।
দৌলখাঁন এর হাজিপুর মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামাদের আগমন ও জলসা এবং খতমে জালালা পড়াবার ব্যাপারে তাঁর প্রচেষ্টা সকল মহলকে বিমোহিত করে। আলেম হিসেবে তিনি ভোলা জেলায় নেতৃস্থানীয় ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ‘তানজিমুল মাসারেস ভোলা’-এর সম্পাদক ছিলেন।১৯৭৮ সালে খুলনা আজম খান ময়দানে বিভাগীয় শিক্ষা ওয়ার্কশপে তিনি যে বক্তব্য রাখেন তা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উক্ত ভাষণ মন্ত্রণালয়ে রেকর্ডভুক্ত করা হয় । তখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন জনাব আমজাদ হোসেন। ষাটের দশকে হাজিপুর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষায় ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ১১তম, ১৩তম ও ১৭তম স্থান লাভবোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষায় ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৮.ম, ১২তম, ১৩তম ও ১৭তম স্থান লাভ করে যা ছিল তখন সাড়াজাগানো এক ব্যাপার। বলাবাহুল্য, স্থানপ্রাপ্তদের অধিকাংশ ছিল তাঁর পরিবারেরই সদস্য। তিনি ১৯৫৩ সালে কবি মোজাম্মেল হকের সহযাত্রী হিসেবে হজ্ব পালন করেন । ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সৌখিন ও অতিথিপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি প্রায়ই ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতেন এবং পাখি শিকারে বেরিয়ে পড়তেন। তিনি ১৯৯০ সালের ৭ অক্টোবর ভোলা সদর হাসপাতালে ৮০ বছর বয়েসে ইন্তেকাল করেন। তাঁর ৩ পুত্র ও ৩ কন্যার মধ্যে প্রথম ২ পুত্রই উচ্চ মেধাসম্পন্ন শিক্ষা ব্যক্তিত্ব (মোস্তফা দৌলৎ ও এএফএম গোলাম কিবরিয়া) এবং যথাক্রমে তারা সরকারি ও বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ । কনিষ্ঠ পুত্র রুহুল আমিন বিভিন্ন সময়ে • পত্রিকায় লিখতেন। তাঁর কয়েকজন ভাই দেশের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব ।
সূত্র ঃ পলি মাটির দেশ ভোলা