জাহাঙ্গীর খাঁন,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ কুষ্টিয়ায় র্যাবের বিশেষ অভিযানে আলোচিত চাঞ্চল্যকর ভেড়ামারা উপজেলার জোড়া খুনের মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি নয়ন সেখ (২৬) নামের এক যুবক একটি বিদেশী পিস্তল ও ৫ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার হয়েছে।
গত রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খানের নেতৃত্বে রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার পলাশী গ্রাম এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতারকৃত নয়ন সেখ কুষ্টিয়া ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ফকিরাবাদ এলাকার নজরুল শেখের ছেলে।
গত সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২ টার সময় এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান।
র্যাব সুত্রে জানা যায়, গত ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮ টার সময় মসজিদ হতে নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার গোলাপনগর ইউনিয়নের ফকিরাবাদ গ্রামের মুজিবর রহমান মাস্টার ও তাঁর ভাই মিজানুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ভুক্তভোগীর ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া নাতনীকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় এলাকার বখাটে কিশোর মোঃ আরিফুল ইসলাম এবং তাঁর আত্মীয়-স্বজন কর্তৃক তাঁরা নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে নিহতের ছেলে জাহারুল ইসলাম বাদী হয়ে ঘটনার পরদিন ২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিল ইং তারিখে ভেড়ামারা থানায় মামলা দায়ের করেন, যাহার মামলা নাম্বার- ১৭, তারিখ- ২৬/০৪/২০১৬, ধারা ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৪/৩২৬/ ৩০৭/৩০২/১০৯/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০, জিআর-৬৬/২০১৬।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ১২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার বিচার শেষে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক আসামি নয়ন শেখ সহ ৪ জন আসামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড ও প্রত্যেককে ৫০,০০০/- টাকা জরিমানা, এবং ৭ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫০,০০০/- টাকা জরিমানা করে অর্থদন্ড অনাদায়ে অতিরিক্ত ১ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ১ জন আসামিকে ১০ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ নয়ন শেখকে গ্রেফতারের ব্যাপারে র্যাব উদ্যোগী হয়ে গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে।তারপর তাঁকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত নয়নকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভেড়ামারার মুজিবর রহমান মাস্টার ও মিজানুর রহমান হত্যাকান্ডে তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে। এছাড়াও সে একটি অস্ত্র মামলা, একটি ছিনতাই মামলা ও একটি ডাকাতি মামলায় তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে বলেও জানিয়েছেন কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান।
র্যাব আরও জানায়, নয়ন শেখ এলাকায় নয়ন বন্ড, নয়ন ডাকাত ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল। হত্যাকান্ডের পর সে প্রথমে ঢাকায় পালিয়ে যায়। তারপর কোর্টে আত্মসমর্পণ করে এ মামলায় দেড় বছর জেল খাটে। জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেলেও পরবর্তীতে জামিন বাতিল হওয়ায় সে ভারতে পালিয়ে যায়। সেখানে সে এক গৃহস্থের বাড়িতে মহিষের রাখাল হিসেবে কাজ করতো। ভারতে থাকা অবস্থায় সে কুষ্টিয়া ও রাজশাহীর বালুর ইজারাদারদের নিকট হতে বিকাশের মাধ্যমে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতো। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে নিজস্ব ট্রলার যোগে মাদক ব্যবসা, মারামারি ইত্যাদি কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তাঁর নামে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা ও দৌলতপুর থানায় ১টি অস্ত্র মামলা, ১টি ডাকাতি, ২টি মারামারি ও ১টি ছিনতাই মামলা সহ মোট ৫টি মামলা রয়েছে যা বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন।
এ বিষয়ে র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান বলেন, বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারন জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডে জড়িত আসামিদের আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ ধরনের অভিযান জনস্বার্থে অব্যাহত থাকবে। তথ্য সূত্র র্যাব অফিস কুষ্টিয়া।।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.