মোঃ কামাল হোসেন,মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
মেহেরপুরের গাংনীতে ছাগল চোর সন্দেহে জুবায়ের হোসেনকে আটক করে বেধড়ক মারপিট ও গ্রাম্য সালিশে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায়ে জুবায়ের হোসেনের করা মামলায় ষোলটাকা ইউনিয়নের বানিয়াপুকুর গ্রামের মাতব্বর শরিয়তুল্লাহ, শহিদুল ইসলাম ও রাশেদুল ইসলাম কে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর), দুপুরের দিকে মাতব্বরদের মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়।
গত সোমবার দিবাগত রাতে গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের বানিয়াপুকুর মাঝপাড়ার আজাম্মেল হকের বাড়ি থেকে ছাগল চোর সন্দেহে ষোলটাকা জোয়ার্দার পাড়ার জুবায়ের কে আটক করা হয়। সে সময় তাকে বেধড়ক মারপিট করে আটকে রাখার পর মঙ্গলবার সকালে গ্রাম্য সালিশ বসিয়ে ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয়। মারপিটের কারণে জুবায়েরের শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়। পরে তাকে গাংনী উপজেলা হেলথ্ কমপ্লেক্সে চিকিৎসারত অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধায় জুবায়ের হোসেন বানিয়াপুকুর গ্রামের মাতব্বর শরিয়াতুল্লাহ, শহিদুল ইসলাম ও রাশেদুল ইসলামসহ ৮ জনের নামে এবং অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনের নামে গাংনী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে গাংনী থানা পুলিশ জুবায়ের হোসেনের করা মামলাটি আমলে নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ৩ জন আসামীকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করে। বাকী আসামীদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান।
উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরে পুকুর পাহারার নামে বানিয়াপুকুর গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির জানালায় উঁকি মারায় বাড়ির লোকজন বাইরে এসে কাউকে না পেয়ে জ্বীন ভেবে ভীতু হয়ে পড়ে। পরে গত সোমবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে গ্রামের আজাম্মেল হকের বাড়িতে উঁকি মারার সময় বাড়ির লোকজন আটক করে জুবায়েরকে। সে সময় ছাগল চুরির অভিযোগ এনে তার উপর অমানবিক নির্যাতন চালানোর পর স্থানীয় একটি স্কুলের কক্ষে আটকে রাখা হয় তাকে। পরে
মঙ্গলবার সকালে গ্রাম্য সালিশ বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়। সালিশ বৈঠকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও মড়কা বাজারের বিশিষ্ট হার্ডওয়ার ব্যবস্থায়ী আব্বাস আলী, শরিয়তুল্লাহ, স্থানীয় ইউপি সদস্য তোজাম্মেল হক, ষোলটাকা ইউপি’র সাবেক সদস্য ময়নাল হক, হেমায়েতপুর পুলিশ ক্যাম্পের আইসিসহ সঙ্গীয় একটি দল ও স্থানীয় অন্যান্য মাতব্বর উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সালিশে জুবায়ের কে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ৩’শ টাকা মুল্যের একটি স্ট্যাম্পে মুচলেকা নেওয়া হয়। একই সাথে ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয় এবং জরিমানার টাকা সালিশ বৈঠকের সমাজপতিদের কাছে রাখা হয়।
জুবায়ের এমন কোন অপরাধ করেনি। তারপরও তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে। যে কারণে সে মামলা করেন। এবং তার পরিপ্রেক্ষিত আসামীদের আটকের পর মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করে গাংনী থানা পুলিশ।