ওসমান আল হুমামঃ ‘ধর্মীয় শিক্ষা বিপ্লবে আহমদ শফীর অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে’
আল্লামা আহমদ শফী রহ. ছিলেন একজন একনিষ্ঠ শিক্ষক ও সময়ের অন্যতম শিক্ষাবিদ। জীবনের প্রায় ৬০ বছর সময় তিনি হাটহাজারী মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে নানামুখী দায়িত্ব পালন করেছেন। একেবারে মকতব জামাত থেকে শুরু করে দাওরায়ে হাদিসের বুখারি পর্যন্ত তিনি এ মাদরাসার ছাত্রদের শিক্ষাদান করেছেন। এই ৬০ বছরে কত সহস্র ছাত্রকে তিনি ইলমে নববি শিক্ষা দিয়েছেন, তার কোনো হিসাব নেই। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের যে প্রান্তেই যাওয়া হোক না কেন, সেখানে একজন হলেও আল্লামা আহমদ শফী রহ.-এর শাগরেদ পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে আছে তার সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ইলমে নববির শিক্ষাধারা।
‘বাংলাদেশে ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ও সংকটের ৫০ বছর; আল্লামা আহমদ শফীর অবদান’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আজ শনিবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল রয়েল প্যালেস হল রুমে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ফিদায়ে মিল্লাত সাইয়েদ আসআদ মাদানীর (রহ.) ছেলে ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের মরণোত্তর সম্মাননা পদক গ্রহণকারী মাওলানা সাইয়েদ মওদুদ আসআদ মাদানী, ভারত।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত ধর্মীয় মুরব্বি, দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার স্বনামধন্য মহাপরিচালক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও যুগশ্রেষ্ঠ আমির, কওমি মাদরাসার সর্ববৃহৎ শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর দীর্ঘ কালীল চেয়ারম্যান এবং এই দেশে ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারের প্রাণপুরুষ আল্লামা আহমদ শফী রহ. ছিলেন সেই দারুল উলুম দেওবন্দের স্পর্শধন্য এক অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্র।
আল্লামা আহমদ শফী কেবল চার দেয়ালের মাঝে গণ্ডিবদ্ধ কোনো শিক্ষক ছিলেন না, ধর্মীয় শিক্ষার যেকোনো সংকটে তিনি এগিয়ে আসতেন একজন সেনাপতির মতো। তিনি প্রায় ৩৬ বছর বাংলাদেশের উম্মুল মাদারিস দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তার সময়কালে হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষা, অবকাঠামো, উন্নয়ন ও পরিচিতি নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ইসলামি দরসগাহ হিসেবে হাটহাজারী মাদরাসার সুনাম দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছিল বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে। হাটহাজারী মাদরাসা পরিণত হয়েছে এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ হিসেবে।
হাটহাজারী মাদরাসার শাইখুল হাদিস হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন বুখারি শরিফের দরস দান করেছেন। শুধু তাই নয়, শাইখুল হাদিস হিসেবে তিনি দেশের অসংখ্য মাদরাসায় খণ্ডকালীন শাইখুল হাদিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নব্বই-ঊর্ধ্ব বয়সেও তিনি হাদিসের দরস ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারে ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
আল্লামা আহমদ শফী (রহ.) শিক্ষা নিয়ে বহুমুখী ধারায় কাজ করেছেন। ধর্মীয় শিক্ষার যেখানে সংকট পরিলক্ষিত হয়েছে তিনি সেখানে তাঁর মেধা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা করেছেন।
কওমি মাদরাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতি নিয়ে আল্লামা আহমদ শফী (রহ.)-এর অবদান বিষয়ে আপনারা সকলেই অবগত আছেন। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া-বেফাক এবং হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনি মাদরাসা শিক্ষার মান ও উন্নয়নে নিরলস ভূমিকা পালন করেন। বিশেষত কওমি সনদের স্বীকৃতি অর্জনে তার অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। লাখ লাখ কওমি শিক্ষার্থী ও ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রাণের দাবিকে তিনি বাস্তবে রূপদান করেছিলেন।
rr
শিশুদের ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে আল্লামা আহমদ শফী রহ. প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নূরানী তালীমুল কুরআন বোর্ড। দেশব্যাপী কয়েক হাজার শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মকতব, স্কুল পরিচালিত হচ্ছে এই বোর্ডের মাধ্যমে।
নারীশিক্ষা বিষয়েও তিনি ছিলেন অগ্রদূত। চট্টগ্রাম অঞ্চলে সর্বপ্রথম বালিকা মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয় আল্লামা আহমদ শফী রহ.-এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। পরবর্তী সময়ে আরও শতাধিক বালিকা মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় তিনি পরোক্ষ ভূমিকা পালন করেন। সেসব মাদরাসায় আজ হাজার হাজার মেয়ে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ইসলাম ও দেশের সাক্ষরতায় নিরব ভূমিকা রাখছে।
মদিনা ইউনিভার্সিটি, আল-আজহার ইউনিভার্সিটি, দারুল উলুম দেওবন্দসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা বিষয়ে আল্লামা আহমদ শফী রহ. ছিলেন বরাবরই উৎসাহী। তার কাছে কোনো শিক্ষার্থী সহযোগিতার জন্য গেলে তিনি তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সহযোগিতার চেষ্টা করতেন। তাঁর প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় দেশের অনেক কওমি শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন।
সাধারণ শিক্ষার পাঠ্যপুস্তকে ইসলামি ভাবধারা বিসর্জন দিয়ে নাস্তিক্য ও হিন্দুয়ানী শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়ার বিষয়ে তিনি তীব্র প্রতিবাদ করায় সরকার পাঠ্যপুস্তক সংশোধন করতে বাধ্য হয়।
এভাবে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিটি সংকটকালে আল্লামা আহমদ শফী (রহ.) এগিয়ে এসেছেন সবার আগে। একজন সিপাহসালারের মতো তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশের ধর্মীয় শিক্ষার অগ্রযাত্রায়। এ দেশের শিক্ষা বিপ্লবে তাঁর অবদান তাই চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে অযুত কাল ধরে।
বক্তারা বলেন, আল্লামা আহমদ শফী (রহ.) আজ আমাদের মাঝে নেই। তাঁর ইন্তেকালের পর দীর্ঘ দুটি বছর পার হয়ে গেছে। তাঁর অভাব ও শূন্যতা বিগত দুটি বছর আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। তাঁর অবর্তমানে বাংলাদেশের ধর্মীয় অঙ্গন ও ধর্মীয় শিক্ষার অনেক অর্জন আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। তাকে ছাড়া আমরা যেন নাবিকহীন জাহাজের মতো উত্তাল সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছি। তাই আজ তার দেখানো পথ অনুসরণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো গত্যন্তর নেই।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধপাঠ করেন ড. কামরুল ইসলাম আজহারি। আরও বক্তব্য রাখেন-অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- উজানীর পীর মাওলানা মাহবুবে এলাহী, শায়খুল হাদীস আল্লামা রুহুল আমীন খান, মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ, মুফতী মোহাম্মদ আলী, ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহাদ্দিস মুফতী ইমাদুদ্দিন, বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র ইমাম মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভি, ড. মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, মাওলানা
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.