ইউরোপ প্রতিনিধি: গত ১৬ই অক্টোবর অনুষ্ঠিত জার্মান আওয়ামী লীগের সম্মেলন এবং কিছু অমিমাংসিত কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। (১) আহ্বায়ক কমিটি গঠন: আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পুর্বের কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে অথবা কোনো অনিবার্য কারণে যদি পুর্বের কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা এবং উক্ত আহ্বায়ক কমিটি ৯০ দিন অথবা সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের মধ্যে সম্মেলন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু জার্মান আওয়ামী লীগ সে নিয়ম না মেনে হাস্যকর ভাবে ১৬ই অক্টোবরের সম্মেলনের আগের দিন রাতে অর্থাৎ ১৫ই অক্টোবর রাতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
(২) উপ-কমিটি গঠন: কোন সম্মেলন করতে হলে উপ-কমিটি গঠন করতে হয়। উপ-কমিটির কাজ হলো আহ্বায়ক কমিটি এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সাথে লিয়াজো বাজায় রেখে কাজ করা এবং দিকনির্দেশনা মেনে চলা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য জার্মান আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কোন উপ-কমিটি গঠন করা হয়নি।
(৩) সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন: সম্মেলনের পুর্বশর্ত হল সবার সর্ব-সম্মতিক্রমে একটি গ্ৰহনযোগ্য নিরপেক্ষ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা যার দায়িত্ব হল- নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সম্মেলন সম্পন্ন করা। যদি কোন কারনবশত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির কোন সদস্য পদত্যাগ করে অথবা কোন কারণে কোন সদস্য পদ শূন্য হয় সেক্ষেত্রে পুনরায় সবার সর্ব-সম্মতিক্রমে ঐ শূন্য পদটি পুরন করা। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির প্রধান অথবা কোন সদস্যের বিরুদ্ধে যদি কোন প্রার্থী বা অন্য কোন ব্যক্তি পক্ষপাতীত্বের অভিযোগ আনে অথবা এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটে সেক্ষেত্রে তদন্তের মাধ্যমে যার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন করে ঐ পদে নিয়োগ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য জার্মান আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান সরাসরি একজন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন এবং এই প্রার্থী কে সাথে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করেছেন এমনকি তিনি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে নেতৃস্থানীয় নেতাদের পরামর্শ ছাড়াই মিউনিখ থেকে একজন সদস্য কে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। একজন প্রার্থী এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পক্ষপাতীত্বের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও তিনি পদত্যাগ করেননি এবং তাকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়নি। এটা সম্পূর্ণরূপে অন্যায় এবং গঠনতন্ত্র পরিপন্থি।
(৪) কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ অমান্য করা: অন্তত একটা ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে। নবনির্বাচিত সভাপতি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে কারো কোন অভিযোগ নেই। তিনি সর্ব সম্মতিক্রমে সভাপতি হবেন এটাও একপ্রকার নিশ্চিত ছিল কিন্তু অন্য একজন প্রার্থীর ব্যপারে কেন্দ্র থেকে বলে দেওয়ার পরও তাকে মুল্যায়ন করা হয়নি। এক্ষেত্রে সম্পুর্নরূপে কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে।
(৫) অব্যবস্থাপনা: জার্মান আওয়ামী লীগের ১৬ই অক্টোবরের সম্মেলন ছিল অব্যবস্থাপনায় ভরপুর। আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে এয়ার পোর্ট থেকে রিসিভ করা হয়নি। তারা নিজেদের টাকা দিয়ে ট্যক্সি ভাড়া করে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে জার্মান নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ পেয়েছেন। সারাদিন ভ্রমণ করে আসার পর রাত ১১টার দিকে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতে একদম নিন্ম মানের হোটেল থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্মেলনের দিন অতিথিদের কয়েকজন বাদে অধিকাংশকেই সকালের নাস্তা খাওয়ানো হয়নি। হোটেল থেকে সম্মেলনস্থলে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা করা হয়েছিল না পরবর্তীতে সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিবের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেয়া হয়েছে। কথা ছিল দুপুরে খাবার পরিবেশন করার পর সম্মেলন শুরু হবে কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সারাদিন না খেয়ে থাকার পর রাত ৯ টার পর খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। অতিথিদের অধিকাংশদের সাথে কোন প্রকার ফোন করে নূন্যতম যোগাযোগ পর্যন্ত করা হয়নি যা ছিল খুবই দৃষ্টিকটু। যদিও সম্মেলনের পরের দিন নবনির্বাচিত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ কিছু নেতৃবৃন্দ তাদের অব্যবস্থাপনার অতিথিদের কাছে জন্য ক্ষমা চেয়েছেন কিন্তু তখন অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল।
(৬) সম্মেলনে অধিকাংশ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অনুপস্থিতি: সম্মেলনে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি ছিল খুবই কম যা অপ্রত্যাশিত। উপস্থিতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মিউনিখের ৬জন, হামবুর্গের ৬জন, ফ্রাঙ্কফুর্ট ও নর্ডরাইন ভেষ্টফালেন মিলে ২০জন, বার্লিনের স্থানীয় বড়জোর ৫০জন। অতিথিদের মধ্যে ফ্রান্সের ১২জন, ডেনমার্কের ৫ জন, নেদারল্যান্ডের ৫ জন, অষ্টিয়ার ১জন, ইংল্যান্ডের ১জন উল্লেখযোগ্য। নেতৃবৃন্দের আশানুরূপ উপস্থিত না থাকার কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পক্ষপাতীত্বের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় জার্মান আওয়ামী লীগের আঁতুড়ঘর বলে খ্যত ফ্রাঙ্কফুর্টের একটি অংশ এই সম্মেলনে অংশ না নেয়া, নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, ত্যগি ও জার্মান আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কাণ্ডারিদের মতামত কে উপেক্ষা করা এবং মুল্যয়ন না করা অন্যতম। সবশেষ মুল্যায়ন হল জার্মান আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠিত ১৬ই অক্টোবরের সম্মেলন জার্মান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আশাআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়েছে কি না তা অবশ্যই কিছু প্রশ্নের দাবি রাখে।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.