মোঃ শরিফুল ইসলাম,লালপুর,নাটোর প্রতিনিধিঃ সৌদি প্রবাসীর ইমো হ্যাক করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে নাটোর লালপুরের সংঘবদ্ধ ইমো হ্যাকিং চক্রের ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে নাটোর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর ২০২২) দিবাগত মধ্যরাতে উপজেলার বিলমাড়িয়া বাজারে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, উপজেলার বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের মোহরকয়া গ্রামের মো. শাহাবুল ইসলামের ছেলে মো. মেহেদী হাসান (২৪), মো. ইয়াসিন আলীর ছেলে মো. রবি (২২), খাঁপাড়া গ্রামের মো. মঞ্জুর রহমানের ছেলে মো. মোহন সরকার (১৯), মনিহারপুর গ্রামের মো. মাজদার প্রামানিকের ছেলে মোঃ শিমুল আলী (১৯), ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের মো. নূর আলম সরকারের ছেলে মো. শাহ পরান সরকার (১৯), নাগশোসা গ্রামের মো. রিফাজ মন্ডলের ছেলে মো. রুবেল মন্ডল (৩২) ও রাজশাহীর বাঘার খানপুর গ্রামের মৃত শামসেদ মন্ডলের ছেলে মো. বেলাল মন্ডল (২৯)।
র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, প্রতারণার স্বীকার কুষ্টিয়ার মিরপুরের কামিরহাট কচুয়াদহের মো. দবির মন্ডলের ছেলে মো. মনিরুল ইসলামের চাচাতো ভাই মো. ওয়াসিম একজন সৌদি প্রবাসী। গত ২৫ অক্টোবর দুপুরে ওয়াসিমের ইমো আইডি হতে মনিরুলের ইমো আইডিতে শ্রমিকের বিল দেওয়ার জন্য মেসেজ আসে। তাতে একটি বিকাশ নম্বর দেওয়া হয়। মনিরুল ওই মেসেজের প্রেক্ষিতে সরল বিশ্বাসে প্রেরিত বিকাশ নম্বরে প্রথমে ২১ হাজার ৫০০ টাকা পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে আরও কয়েকটি বিকাশ নম্বরে টাকা দিতে বললে সর্বমোট ১ লাখ ২০ হাজার ৮৬০ টাকা পাঠিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর চাচাতো ভাই মনিরুলকে ফোন করে জানান, তার ব্যবহৃত ইমো একাউন্টটি হ্যাক হয়েছে। তখন মনিরুল বলেন, তুমি শ্রমিকের বিল দেওয়ার জন্য যে বিকাশ নম্বরগুলো পাঠিয়ে দিয়েছিলে সে গুলোতে আমি ইতিমধ্যে সর্বমোট ১ লাখ ২০ হাজার ৮৬০ টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। তখন ভূক্তভোগী মো. মনিরুল ইসলাম বুঝতে পারেন, সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র তার চাচাত ভাইয়ের ইমো একাউন্ট হ্যাক করে প্রেরিত বিকাশ নম্বরগুলো দিয়ে তার সাথে প্রতারণা করে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
এরপর ভূক্তভোগী মো. মনিরুল ইসলাম র‌্যাবের টহল দলের নিকট ইমো হ্যাক করে প্রতারনার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি বিস্তারিত বর্ননা করেন। পরবর্তীতে সিসিসি-২ নাটোর ক্যাম্প, র‌্যাব-৫, রাজশাহীর একটি আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তি ও বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে লালপুর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভূক্তভোগীর চাচাতো ভাইয়ের ইমো হ্যাক করে প্রতারনার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সেই সংঘবদ্ধ ইমো হ্যাকিং চক্রের ৭ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
সিপিসি-২, নাটোর ক্যাম্প, র‌্যাব-৫, রাজশাহীর কোম্পানী অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রতারণার স্বীকার কুষ্টিয়ার মিরপুরের কামিরহাট কচুয়াদহের মো. দবির মন্ডলের ছেলে মো. মনিরুল ইসলামের (৩৮) অভিযোগের প্রেক্ষিতে তথ্য-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার বিলমাড়িয়া বাজার এলকায় অভিযান চালিয়ে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমো হ্যাক করে বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণা পূর্বক অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় ওই সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৯টি সিমকার্ডসহ মোবাইল সেট, দুই বোতল ফেনসিডিল, ডিভিআর সেট ও নগদ ১৫ হাজার ৪০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবৎ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে প্রবাসীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইমো ব্যবহারকারীদের ইমো হ্যাক করে তাদের পরিচিত জনদের নিকট হতে প্রতারণা পূর্বক মোবাইল ফিন্যান্সিং সার্ভিস বিকাশের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেন।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২০/২৪/৩৪/৩৫ ধারায় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে থানায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে নাটোর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।