মোঃ খলিলুর রহমান,সাতক্ষীরাঃ বাঘের পাশাপাশি হরিণ ও শূকর গণণার জন্য সুন্দরবনে ৬৬৫ স্পটে স্থাপন করা হচ্ছে জোড়া ক্যামেরা। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সুন্দরবনের ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু হবে। ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’-এর আওতায় প্রাথমিকভাবে বনের মধ্যে খালের দুই পাশে জরিপ করে বাঘের গতিবিধি ও পায়ের ছাপ লক্ষ্য করার কাজ শুরু করেছে বনবিভাগ।
গত ১৫ ডিসেম্বর সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের কালাবগি ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন খালগুলোর দুই পাশে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে বাঘ শুমারি বা গণনার জন্য সুন্দরবনের ৬৬৫ স্পটে স্থাপন করা হবে জোড়া ক্যামেরা। বাঘ গণনার ফলাফল জানা যাবে ২০২৪ সালের জুনে।
গত ২৩ মার্চ বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়।
জানা যায়, বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২৩ মার্চ ‘সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র বাঘ শুমারি খাতে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, প্রকল্পের আওতায় এবার বাঘ শুমারির পাশাপাশি হরিণ ও শুকর শুমারি করা হবে। এই প্রকল্পের দুটি বিষয় রয়েছে। এরমধ্যে একটি ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে গণনা, আরেকটি হচ্ছে খাল সার্ভে। প্রাথমিকভাবে বনের খালের দুইপাশে জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। এরমাধ্যমে বাঘের গতিবিধি ও পায়ের ছাপ লক্ষ্য করার কাজ শুরু করা হয়েছে। আর গণনার জন্য ক্যামেরা বসানোর কাজ আগামী ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে। কয়ামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে ২ বছর আমরা ছবি তুলবো। তার পর ২ মাস ছবি এ্যানালাইসিস করবো। এরপরই সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের একটি টেনিক্যাল কমিটি রয়েছে। ওই কমিটির মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সুন্দরবনের মোট ৬৬৫টি স্পটে ক্যামেরা বসানো হবে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২০০টি, খুলনা রেঞ্জে ১৪০টি, শরণখোলা রেঞ্জে ১৮০টি, চাঁদপাই রেঞ্জে ১৪৫টি। প্রতিটি গ্রীডে এক জোড়া ক্যামেরা বসানো হবে। সবমিলিয়ে ৬৬৫ গ্রীডে ১ হাজার ৩৩০টি ক্যামেরা বসানো হবে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাস থেকে বাঘ গণনার কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের অর্থ ছাড় নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। পরে অক্টোবরে ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ছাড় দেয় পরিকল্পনা কমিশন। সম্প্রতি দুই কিস্তিতে ১ কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশের জাতীয় পশু। পৃথিবীতে আইইউসিএন বাঘকে অতি সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে ৩ হাজার ৮৪০টি বাঘ রয়েছে। ২০১৫ সালে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬। ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। তার মধ্যে পূর্ণ বয়স্ক ৬৩টি, ১৮টি ১২ থেকে ১৪ মাস বয়সী এবং ৩৩টি শাবক।