আনোয়ার হোসেন,লক্ষ্মীপুরঃ দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সবকিছুতেই যেন আধুনিকতার ছোঁয়া। যা থেকে বাদ পড়েনি প্যাডেল রিক্সাও। যান্ত্রিকতার এ আধুনিক যুগে কর্মজীবী মানুষের জন্য এখন পেশীশক্তির বদলে আবিষ্কার হয়েছে ইলেক্ট্র্রনিক ও সহজলভ্য যানবাহন। পেশি শক্তিকে কাজে না লাগিয়ে যতটা আরাম আয়েশে কর্ম করা যায় মানুষ এখন সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছে। তাই পায়ে চালিত রিক্সার প্যাডেলের পরিবর্তে মানুষ এখন ঝুঁকে পড়েছে যান্ত্রিক এই ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সার প্রতি। তবে খেটে খাওয়া দিনমজুরদের সকলের সামর্থ্য না থাকায় অনেকেই এখনো পায়ে প্যাডেল দিয়ে রিক্সা চালাচ্ছেন। কিন্তু যান্ত্রিক রিক্সার সাথে পেরে উঠছে না পেশি শক্তি দিয়ে প্যাডেল চালিত রিক্সা। ফলে দুর্দিন পোহাতে হচ্ছে অসহায় রিক্সা শ্রমিকদের।যার কারন হারিয়ে যেতে বসেছে প্যাডেল রিক্সা।
সমাজে কর্মহীন হয়ে পড়া কম শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষত কিংবা দিনমজুরের কাজ করা লোকেরাই এখন বেশিরভাগ ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সার চালক। ব্যাটারি চালিত রিক্সায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকলেও এটাই এখন কর্ম হারানো মানুষের প্রথম পছন্দ। কারো কারো মতে অলস মানুষের পেশা হিসেবে ব্যাটারি চালিত রিক্সাই বেশি পছন্দ। এদিকে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ, রায়পুর,রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়সের লোকই ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। অটোরিক্সা চালকদের ভাষ্য,তারা কোন কাজ কর্ম করতে পারছেনা কারনেই ব্যাটারীচালিত রিক্সা চালিয়ে কোন রকম খেয়ে পড়ে বেঁচে আছেন ।
জানা যায় ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা আসার পর প্যাডেল রিক্সার জায়গা পুরোটাই দখল করে নিয়েছেন । পাঁচ/ছয় বছর আগেও এ সব এলাকার মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল রিক্সা। বর্তমান সময়ে অনুসন্ধানে দেখা দেখা যায় লক্ষ্মীপুর জেলার উপজেলা রামগঞ্জের পানপাড়া,রায়পুরের রাখালিয়া ও হায়দার গঞ্জ,সদর লক্ষ্মীপুরের লঞ্চ ঘাট, রামগতির লঞ্চ ঘাট ও রামগতি বাজার এবং কমলনগরের মাতাব্বরহাট এলাকায় মাঝেমধ্যে হাতেগোনা একটা দু’টো প্যাডেল রিক্সা দেখা যায়। যে দু’একটি দেখা যায় সেগুলোও হয়ত অল্প দিনের মধ্যেই হারিয়ে যাবে। অথচ এক সময় লক্ষ্মীপুরের আনাচে কানাচে দেখা যেত প্যাডেল রিক্সা। আর এই রিক্সার প্যাডেল ঘুরিয়ে সংসার চলত শত শত মানুষের। কিন্তু বর্তমান সময়ে গোটা লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়েও খুব একটা দেখা মেলেনা প্যাডেল রিক্সার। যে সকল প্যাডেল চালিত রিক্সা চলাচল করে সেগুলোর চালকরাও বেশ বয়স্ক। তারা তাদের পেশি শক্তি দিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট করতে পারেন না যাত্রীদের।
কমলনগরের মাতাব্বরহাট রোডে রিক্সা চালক জয়নাল (৫৬) বলেন, ‘গত ৩০ বছর ধরে কমলনগরে রিক্সা চালাই। এখনো রিক্সা চালিয়ে যাচ্ছি। গত ৭-৮ বছর আগেও প্রতিদিন ৭০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা আয় করতে পারতাম। এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিক্সা চালিয়ে ৩ শত থেকে চার শত টাকা আয় হয়। আবার কোনো কোনো দিন সেটা হয়ও না। মানুষ এখন আর রিক্সায় উঠতে চায় না। আমাদের অটো রিক্সা কেনার টাকা নেই এজন্য বাধ্য হয়ে প্যাডেল রিক্সাই চালাতে হয়”। তিনি আরো বলেন,এখন মানুষ অলস হয়েছে। মানুষের সময় কমে গেছে। কেউ রিক্সায় চড়ে দূরে কোথাও যেতে চায় না। আমরা দিনরাত যে টাকা আয় করি তা দিয়ে সংসার চলে না। দীর্ঘদিন ধরে রিক্সা চালিয়ে আসছি। এটা ছেড়ে দিয়ে এখন অন্য কোনো পেশায় যাব তারও উপায় নেই।
এলাকার একাধিক প্রবীণ লোকদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, ‘আমরা ৯ -১০ বছর পূর্বে বাজার করা সহ বিভিন্ন কাজে বের হলে রিক্সাতেই ঘুরে বেড়াতাম। তাছাড়া সেই সময়ে এতো মোটরসাইকেলর ব্যবহার ছিল না। অধিকাংশ মানুষ প্যাডেল রিক্সায় চড়েই অফিস, আদালত ও দোকানপাটে পৌঁছাতে। খুব ভালো ছিল সেই দিনগুলো। তারা বলেন, বর্তমানে মানুষের মধ্যে অলসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অটো চালকরা পায়ের উপর পা তুলে অটো চালায়। এতে দুর্ঘটনাও ঘটে। বর্তমানে যে পরিমান ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা চলাচল করে তাতে শুধু লক্ষ্মীপুর জেলায় নয় সারা দেশ থেকে প্যাডেল রিক্সা-ভ্যান বিলুপ্ত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.