মোঃ মজিবর রহমান শেখঃ ঘনশ্যাম কুন্ডু নামক একজন কাপর ব্যবসায়ী ব্যবসা করতে হরিপুরে আসেন। সেই সময় মেহেরুন্নেসা নামে এক বিধবা মুসলিম মহিলা হরিপুর অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। খাজনা অনাদায়ের পরার কারণে মেহেরুন্নেসার জমিদারির কিছু অংশ নিলাম হয়ে গেলে ঘনশ্যাম কুন্ডু কিনে নেন। ঘনশ্যামের ছেলে রাঘবেন্দ্র রায় চৌধুরী ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে হরিপুর জমিদার বাড়ির প্রথম স্থাপনা ফলক নির্মাণ করেন। কিন্তু তাঁর সময়ে রাজবাড়ির সমস্ত কাজ শেষ হয়নি। রাঘবেন্দ্র রায়ের পুত্র যোগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ১৮৯৩ খ্রীস্টাব্দে রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। যোগেন্দ্রনাথের ছোট ভাই নগেন্দ্রনাথ বিহারী রায় চৌধুরী জমিদার বাড়ির উত্তর ও দণি প্রান্ত বড় তরফ ও ছোট তরফে ভাগাভাগি করে নেন। পরবর্তীতে বড় তরফ থেকে জমিদার যোগেন্দ্র নারায়নের দুই ছেলে জমিদারি চালান। তারা হলেন রবীন্দ্র নারায়ন রায় চৌধুরী ও বিশ্বেন্দ নারায়ন রায় চৌধুরী। অপর ভাই নগেন্দ্র নারায়নের দুই ছেলে রমেন্দ্র কৃষ্ণ রায় চৌধুরী ও গিরিজা বল্লভ রায় চৌধুরী জমিদার বাড়িতে বসবাস করতেন তার মধ্যে রমেন্দ্র ঘরকুনে স্বভাবের হলেও গিরিজা বল্লভ রায় ছিলেন আমুদ প্রকৃতির। নাচ, গান ও ক্রীড়ানুরাগী। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় তারা ভারতে চলে যান। এবং দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে রাজবাড়িটি। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে জমিদার বাড়িটি সংস্কার করে বাংলাদেশ সরকার।
চলতি বছরের ২০ নভেম্বর জমিদার বাড়ির দেয়ালে ঝোলানো সাইনবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী গ্রামীণ অবকাঠামো রণাবেণ (টিআর) কর্মসূচীর আওতায় প্রথম ধাপে হরিপুর জমিদার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে সংস্কারের কাজ চলছে। শেওলা পরিষ্কার করে দেওয়ালে দেওয়া হয়েছে রং। লতাপাতায় আগাছা কেটে করা হয়েছে পরিষ্কার। এখন দূর থেকে দেখলেই মনে হয় এটি জমিদারের বাড়ি। কালের স্বাী এই জমিদার বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে জানেন না নতুন প্রজন্ম। সংস্কার কাজ শেষ হলে দেশের সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য জানতে দেশের সব প্রান্ত থেকে পর্যটক আসবে। স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, পুরনো এ ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ময়লাস্তুপে থাকা জমিদার বাড়িটি করোনা মহামারির সময় নিজ উদ্যোগে পরিস্কার করে স্থানীয় শিশু, কিশোর ও যুবকরা। এটি সংস্কারের দাবিতে সড়কে দাড়িয়ে মানববন্ধন সহ শিা জীবনে বাড়িটির গুরুত্ব তুলে ধরে লিফলেটও বিতরণ করেছিল তারা। কিন্তু তখন কোন কাজ হয়নি গত ২০ নভেম্বর থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এটা আবার সংস্কার করে নতুন রুপে সাজানো হচ্ছে। এতে করে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। এটা একটি মহত উদ্যোগ বলে আমরা মনে করছি। হরিপুর জমিদার বাড়ি সংস্কার ও সংরণ কমিটি আহ্বায়ক সালমান ফার্সি বলেন, বাড়ির পেছনের দেয়ালে হালকা নকশা। দেয়ালের উপরে জমিদার যোগেন্দ্র নারায়ন রায় চৌধুরীর খোচিত মূর্তি। বাড়ির ভেতরে বেশ কিছু ক রয়েছে। জমিদারি পরিচালনার জন্য কাচারী, ধর্মীয় উৎসবের জন্য বিভিন্ন উপাসনালয়, বিনোদনের জন্য নাচমহলসহ বিভিন্ন ক রয়েছে। বর্তমানে সংস্কারের পর রাজবাড়ীর রূপ তা সবাইকে মুগ্ধ করেছে। উত্তরবঙ্গের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে এটাকে গড়ে তোলা সম্ভব। হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ কে এম শরীফুল হক বলেন, বাড়িটি সংস্কারের জন্য প্রতূতাত্বিক সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছিল। তারা জানিয়েছে বাড়িটি এখনো তাদের প্রতূতাত্বিক নথিভুক্ত হয়নি। গত ২০ নভেম্বর থেকে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মহদোয়ের দেয়া বরাদ্ধে জমিদার বাড়ির সংস্কার কাজ শুরু হয়ে চলছে। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমি বেশ কয়েকবার হরিপুর জমিদার বাড়িটি দর্শনে যাই। এটা সংস্কার করলে ভাল একটি পর্যটন স্থান হবে এবং নতুন প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে তাই জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এই বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.