প্রচলিত একটি কথা আছে, 'সুস্থ মা, সুস্থ সন্তান'। এ কথার মানে হচ্ছে, গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপর শিশুর স্বাস্থ্য নির্ভর করে। মা যদি সুস্থ থাকে তাহলে শিশুও সুস্থ থাকবে। আর তাই মা ও শিশু উভয়ের কথা চিন্তা করে, গর্ভধারণ এর প্রথম দিন থেকে মায়ের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। সেইসাথে অন্যান্য বিষয়ে তার অতিরিক্ত যত্নও নিতে হবে। আমাদের দেশে বেশির ভাগ মেয়ে কম বয়সে গর্ভধারণ করে ও অপুষ্টির শিকার হয়। এর ফলে মহিলারা কখনও কখনও অপুষ্ট সন্তান, এমনকি মৃত সন্তানও প্রসব করে।তাছাড়া, গর্ভবতী মায়েরা অপুষ্টিতে আক্রান্ত থাকলে তার জন্ম দেয়া সন্তানের ওজন কম হয়। বাচ্চার বুদ্ধির সঠিক বিকাশ ঘটে না। স্বাস্থ্যও ভাল থাকে না। তার বেশিরভাগ সময় কাটে অসুখবিসুখে। শিশুর জন্মের পর অপুষ্টিতে ভোগা মায়েদের দেহে যে ক্ষয় হয় তা সহজে পূরণ হয় না। ফলে, অসুখ বিসুখও তাদের পিছু ছাড়ে না। এজন্য গর্ভাবস্থায় মায়ের যথাযথ যত্ন ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। আসুন জেনে নেই গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও পুষ্টি সম্পর্কে-
গর্ভকালীন সময়ে মায়ের যত্ন:
গর্ভধারণের সময় হতে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত সময়কালে মা ও শিশুর যত্নকে গর্ভকালীন যত্ন বা Antinatal Care বলে। এ অবস্থায় মাকে বিভিন্ন প্রকার ভারী কাজ যেমন ধান ভানা, ভারী জিনিস উপরে তোলা, টিউবওয়েল চাপা, ভারী বা অতিরিক্ত কাপড় ধোয়া ইত্যাদি থেকে বিরত রাখতে হবে।
এই গর্ভকালীন যত্নের লক্ষ্য হলো মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং গর্ভজনিত কোনো জটিলতা দেখা দিলে তার প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা।
তাই গর্ভবতী মাকে অবশ্যই সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।গর্ভস্থ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য গর্ভবতী মহিলাকে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তিতে রাখতে হবে। বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার ও প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে । গর্ভবতী মাকে দুপুরে খাবারের পর ২ ঘন্টা ও রাতে ৮ ঘন্টা করে নিয়মিত বিশ্রাম নিতে দেওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় অন্তত চারবার গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষা যেমন মায়ের ওজন, রক্তচাপ, রক্তস্বল্পতা ও গর্ভে শিশুর অবস্থান নির্ণয় ইত্যাদি করানো উচিত।
এছাড়াও-
গর্ভধারণের পরপরই একজন গর্ভবতী মহিলার গর্ভকালীন যত্নের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে অথবা ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। প্রথম ভিজিটের পর একজন গর্ভবতীকে সাধারণত ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিমাসে একবার, ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ১৫ দিনে একবার এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার এই গর্ভকালীন যত্নের জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়।
৫ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ২টি টিটি টিকা নিতে হয় ।
তবে গর্ভকালীন সময়ে কোনো ধরনের জটিলতা দেখা দিলে অতি দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
যেকোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা ক্লিনিকে ডেলিভারি করানো নিরাপদ । যদি তা সম্ভব না হয়, তবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী দ্বারা ডেলিভারি করাতে হবে । গর্ভধারনকালীন মায়ের পুষ্টি সেবা:
আমরা অনেকেই মনে করে থাকি যে, গর্ভবতী মাকে অধিক খেতে দিলে গর্ভের সন্তান বড় হয়ে প্রসবে কষ্ট বেশী হবে। এই ভয়ে সন্তানসম্ভবা অনেক মহিলা কম খেয়ে থাকেন। কিন্তু, আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত এই ধারণাটির মধ্যে বাস্তবতার লেশমাত্র নেই। মায়ের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উপরই নির্ভর করে অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্য। এসময়ে গর্ভবতী মাকে পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাবার না দিলে তা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। যেহেতু গর্ভের শিশু মায়ের শরীর থেকে তার প্রয়োজনীয় উপাদান পায় তাই গর্ভবতী মাকে অধিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশু দু’জনের সুস্থতার জন্য একটু বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন । আমাদের দেশে বেশির ভাগ মেয়ে কম বয়সে গর্ভধারণ করে ও অপুষ্টির শিকার হয়। এর ফলে তারা কখনও কখনও অপুষ্ট সন্তান, এমনকি মৃত সন্তানও প্রসব করে।তাছাড়া, গর্ভবতী মায়েরা অপুষ্টিতে আক্রান্ত থাকলে তার জন্ম দেয়া সন্তানের ওজন কম হয়। বাচ্চার বুদ্ধির সঠিক বিকাশ ঘটে না। শিশুর জন্মের পর অপুষ্টিতে ভোগা মায়েদের দেহে যে ক্ষয় হয় তা সহজে পূরণ হয় না। ফলে, অসুখ বিসুখও তাদের পিছু ছাড়ে না। এজন্য গর্ভাবস্থায় মাকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী খাবার দিতে হবে।
একজন গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি সেবা নিশ্চিত করার জন্য যে যে বিষয়গুলো খেয়াল করতে হবে:
১) গর্ভাবস্থায় প্রতি বেলায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অন্তত এক মুঠ পরিমাণ খাবার বেশি খেতে দিতে হবে।গর্ভবতী মাকে বেশিবেশি গাঢ় সবুজ শাকসব্জি ও মৌসুমী দেশী ফল খেতে দিতে হবে।গর্ভবতী মাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ, মাংস, ডাল, দুধ, ডিম ও কলিজা খেতে দিতে হবে । এছাড়া তার জন্য রান্নায় যথেষ্ট পরিমান ওমেগা-৩ যুক্ত বিভিন্ন ভোজ্য তেল যেমন সয়াবিন তেল, অলিভ অয়েল, সূর্যমুখীর তেল ইত্যাদি যুক্ত করতে হবে।
২) গর্ভস্থ শিশুর হাড় ও অভ্যন্তরীন অঙ্গসমূহের গঠণের জন্য ভিটামিন 'এ' প্রয়োজন। শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে বেড়ে ওঠা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি ও দৃষ্টিশক্তি সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ভিটামিন এ খুবই দরকার। তাই ‘ভিটামিন এ’-এর চাহিদা পূরণে খাবারের তালিকায় মুরগির কলিজা, ডিম, গাজর, আম, গাঢ় কমলা ও হলুদ রঙের ফল এবং গাঢ় সবুজ রঙের শাকসবজি ইত্যাদি থাকা চাই।
৩) ফলিক এসিড গর্ভবতী মায়ের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পুরণসহ গর্ভস্থ্য শিশুর শারীরিক গঠন ও রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।তাই মহিলাদের গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হবার সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ সাপেক্ষে ফলিক এসিড যুক্ত আয়রন ট্যাবলেট খেতে দিতে হবে। গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার খেতে দিতে হবে।
৪) গর্ভাবস্থায় জিঙ্কের পরিমাণ কম হলে কম ওজনের শিশু জন্ম দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া দেহের বৃদ্ধি রোধ বা বামনত্ব হতে পারে। এছাড়াও জিংকের অভাবে পরবর্তীতে শিশুর ডায়রিয়া বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও কনজাংকটিভার প্রদাহ, পায়ে বা জিহ্বায় ক্ষত, মুখের চারপাশে ক্ষত, আচরণগত অস্বাভাবিকতা, অমনোযোগিতা, বিষন্নতা, সিজোফ্রেনিয়া, ক্ষুধা মন্দা দেখা দেয়। ভেড়া ও গরুর মাংস,ফুলকপি,সবুজ শিম, টমেটো ইত্যাদিতে।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.