মোঃ ওসমান গনি ইলি,কক্সবাজারঃ কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর খোরশেদ আলম হত্যাকান্ডের ঘটনার প্রধান আসামী মো. তারেক (২৪)কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫। গতকাল (৪ এপ্রিল) রাত ২ ঘটিকায় জেলার চকরিয়া থানাধীন হারবাং এলাকা হতে তাকে আটক করে র্যাবের একটি আভিযানিক দল।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন আটককৃত তারেক। দোকান বকেয়া বাবদ তারেকের নিকট খোরশেদের পাওনা ৪৫০ টাকা পরিশোধ নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে অন্য সহযোগীদের নিয়ে খোরশেদকে খুন করার পরিকল্পনা করেন তারেক। সেই মোতাবেক গত ২০ মার্চ, ২০২৩ রাত ৯ ঘটিকায় কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া থানাধীন উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের মিজ্জির পাড়া এলাকার বেড়ি বাঁধের পাশে ঝাউবাগানে খোরশেদকে ডেকে নেওয়ার পর ধারালো লোহার রড, কিরিচ, দেশীয় ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি আঘাতের পর মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তারা। র্যাব সূত্র আরো জানায়, ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত তারেক এলাকা ছেড়ে চকরিয়ায় চকরিয়া উপজেলার হারবাং এলাকাস্থ তার মামার বাড়িতে আশ্রয় নেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য তিনি এসময় মোবাইল ফোন ব্যবহারও বন্ধ করে দেন। কিন্তু র্যাব গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করে গতকাল মাধ্যরাতে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টাকালে আসামি তারেক র্যাব কর্তৃক ধৃত হন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নিহত খোরশেদ আলম একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। একই এলাকার বাসিন্দা তারেক দীর্ঘদিন ধরে খোরশেদের দোকান থেকে বাকীতে চা-নাস্তা করাসহ ছোটখাটো পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে আসছিল। গত ১৮ ই মার্চ ২০২৩ ভিকটিম খোরশেদ আলম আসামী তারেকের নিকট থেকে বাকী টাকা চাওয়ায় একপর্যায়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ও ঝগড়া সৃষ্টি হয়, যার জের ধরে আসামিরা খোরশেদকে পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। ঘটনার পরপর স্থানীয় লোকজন ভিকটিম খোরশেদ আলমকে রক্তাক্ত ও মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে কুতুবদিয়া সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় পরবর্তীতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় এবং সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ঘটনার ১১ দিন পর গত ৩১ই মার্চ ২০২৩ তারিখ খোরশেদ আলম মৃত্যুবরণ করেন।
উক্ত ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসলে তা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় নিহত খোরশেদ আলমের পিতা আব্দুর রহমান বাদী হয়ে গত ২২ মার্চ ২০২৩ তারিখ গ্রেফতারকৃত তারেককে প্রধান আসামি করে ও তার অপর ৫ জন আসামীর নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরো ৭ জনকে বিবাদী করে কুতুবদিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং- ০৮, তারিখ- ২২/০৩/২০২৩ খ্রিঃ, পেনাল কোড ১৪৩/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৩৪ ধারা। গ্রেফতারকৃত তারেক কুতুবদিয়া উপজেলাধীন মিজ্জিরপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের পুত্র।
এ প্রসঙ্গে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ক্যাম্পের অধিনায়ক মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদেরকে আইনের আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছে র্যাব। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।